পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ৬২ কোটি টাকার অনিয়ম
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক অনিয়ম বের করে নিয়মের মধ্যে আনা যাদের দায়িত্ব সেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির ১২টি গুরুতর আর্থিক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতর। বিএসইসির ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সালের নিরীক্ষা শেষে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকার অনিয়ম পাওয়া গেছে।
বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ১২টি আর্থিক অনিয়ম সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিকে ৫ মে লিখিতভাবে জানিয়েছে। আগামী ৫ সপ্তাহের মধ্যে ওই আর্থিক অনিয়মগুলোর বিষয়ে নিষ্পত্তিমূলক জবাব দেওয়ার জন্য বিএসইসিকে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় আপত্তিগুলোর বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
যে ১২টি ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে-
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত বিবিধ আয়ের ওপর ভ্যাট প্রদান না করায় সরকারের ১৬ কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি।
সিডিবিএল (সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড) ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫৩টি বিও অ্যাকাউন্ট থেকে ২০০ টাকা করে সরকারি অংশের আদায়কৃত টাকা কমিশনে না পাঠানোয় সরকারের ৩১ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়।
বিএসইসির যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাবে কমিশনের ব্যাংকে স্থিতিকৃত টাকা যথাসময়ে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ না করায় প্রতিষ্ঠানটির ৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি।
ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্তাবলী পরিপালন না করে অফিস ডেকোরেশনের কাজের জন্য অনিয়মিতভাবে ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকার বিল পরিশোধ।
বিএসইসি সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধি লঙ্ঘন, জালিয়াতি ও প্রতারণার জন্য স্টক ব্রোকারের বিপরীতে আরোপিত জরিমানা সম্পূর্ণ আদায় না করায় কমিশন আনুকূল্য প্রদর্শনের কারণে (অব্যাহতি প্রদান করায়) ২১ লাখ টাকা ক্ষতি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে প্রতিটি গাড়িতে প্রতি আর্থিক বছরে ৭৫ হাজার টাকার অধিক ব্যয় করায় প্রতিষ্ঠানের ১৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ক্ষতি এবং সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অতিরিক্তহারে গাড়ি চালকদের ওভার টাইম ভাতা প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের ৩১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়।
নিম্নতর দরদাতাকে টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সর্বাধিক থেকে রেসপনসিভ হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে তুচ্ছ অজুহাতে দরপত্র বাতিলের মাধ্যমে উচ্চদরদাতার কাছ থেকে গাড়ি কেনায় প্রতিষ্ঠানের/সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, যা আদায়যোগ্য।
প্রকৃত গাড়ি মেরামত কাজ করার পক্ষে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ (মেরামতকালীন গাড়ি ওয়ার্কশপে যাওয়ার এন্ট্রি) না থাকা সত্ত্বেও মেরামত কাজের বিল প্রদর্শন/দাখিল করার মাধ্যমে ৭ লাখ ২ হাজার টাকা অনিয়মিতভাবে ব্যয় দেখানো হয়, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে প্রাপ্ত সম্মানি/ফি’র এক-তৃতীয়াংশ সরকারি তহবিলে জমা না করায় প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ক্ষতি হয়।
বিএসইসির নিয়ন্ত্রাণাধীন শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য নিবন্ধিত কোম্পানিসমূহ নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলেও বিএসইসি ও ক্রেডিট রেটিং কোম্পানিসমূহ কোনো নিবন্ধন ফি এবং নবায়ন ফি প্রদান না করায় কমিশন ৫৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ১১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৫টি বিও অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ টাকা করে আদায়কৃত অর্থ কমিশনে না পাঠানোয় প্রতিষ্ঠানের ৫ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের চিঠির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান, বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।
(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এসআর/এইচএসএম/সা/মে ১০, ২০১৪)