দেবু মল্লিক, যশোর : এক সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে ভবদহ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শিক্ষা কার্যক্রমে। ইতোমধ্যে ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে বন্ধ করে সেখানে আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক স্কুল সরকারিভাবে বন্ধ ঘোষণা না করলেও জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষা কার্যাক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে, আগামী ৬ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে সংশয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভয়াবহ এই জলাবদ্ধতার কারণে গতবছর ভবদহ এলাকার শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এবারও তেমনই আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যশোরের মণিরামপুরে ৩৯২টি, কেশবপুরে ১৯৭টি ও অভয়নগরে ২৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে বর্তমানে লেখাপড়া করছে এক লাখ ৩২৯ জন। এদের মধ্যে ১৬ হাজার ৮০৬ জনের মতো শিক্ষার্থীর এবার পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। এছাড়া এসব শিক্ষার্থীদের আগামী ৬ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরুর সময়সূচি রয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলার ঝিকরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক প্রদীপ জানান, বিদ্যালয়ের মাঠে বেশ আগেই পানি জমে আছে। বর্তমানে ঘরের মধ্যে পানি ঢুকছে। সামনে পরীক্ষা তাই এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে অনেক অভিভাবক শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। এজন্য শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে।

নওয়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা শহীদুল ইসরাম বলেন, ‘স্কুলের মাঠে কোমর পানি। বাড়তে বাড়তে বর্তমানে পানি স্কুল ঘরে ঢুকে পড়েছে। এজন্য গত দুই দিন স্কুলে কোন শিক্ষার্থী আসেনি। তাই ক্লাসও হয়নি। আগামী ৬ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার তাপস কুমার অধিকারী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মণিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুরে অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দ্রুত পানি সরে না গেলে হয়তো আরো কিছু প্রতিষ্টানের শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে হবে। আগামী ৬ আগস্টের সাময়িক পরীক্ষা কি করা যায় তা আমরা ভাবছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা অফিসার বলেন, ‘গত বছর বন্যার কারণে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম কয়েক মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আমরা শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বাড়তি ক্লাসের ব্যবস্থা করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ক্ষতির পুরোপুরি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এবারও তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

এলাকাবাসীর তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ১২০ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে মণিরামপুরের শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙ্গা, আমিনপুর, নাগোরঘোপ, চিনাটোলা, জামলা, মুজগুন্নি, হালসা, ঘুঘুরাইল, আগরহাটি, তেঘরি, সৈয়দ মোহাম্মদপুর ও বাঙ্গালীপুর, খানপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভরতপুর, ঘুঘুদা, গোপালপুর, শেখপাড়া, দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের দূর্বাডাঙ্গা, কুশখালী, হরিণা ও কোনাকোল, কুলটিয়া ইউনিয়নের সুজাতপুর, হাটগাছা, মশিয়াহাটী, কুলটিয়া, বাজেকুলটিয়া, চালুয়াহাটি ইউনিয়নের গৌরিপুর, রতনদীয়া, রতেœস্বরপুর, আটঘার ও গুপিকান্তপুর, হরিদাসকাটি ইউনিয়নের নেবুগাতী, পাঁচকাটিয়া, পাজবাড়িয়া, কুমারসীমা, ভুলবাড়ি ও কুচলিয়া, মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দি, বাজিতপুর, ভবানিপুর, মনোহরপুর ও কপালিয়া, মশ্মিমনগর ইউনিয়নের চাকলা, হাকিমপুর ও পারখাজুরা, হরিহরনগর ইউনিয়নের ডুমুরখালি গ্রামের জলাবদ্ধতা মারাত্মক রুপ নিয়েছে। একারণে সরকারিভাবে উপজেলার ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

একই অবস্থা অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের মাগুরা, জিয়াডাঙ্গা, বনগ্রাম, চেঙ্গুটিয়া ও বালিয়াডাঙ্গা, সুন্দলী ইউনিয়নের রাজাপুর, রামসরা, আড়পাড়া, হরিসপুর, ফুলেরগাতি, গোবিন্দপুর, সড়াডাঙ্গা, ডহর মশিয়াহাটি, ডাঙ্গা মহিশদিয়া, পায়রা ইউনিয়নের দিঘলিয়া, বারান্দি, আড়পাড়া, পায়রাসহ ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে এ উপজেলায় তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কেশবপুর উপজেলার টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৪০টি গ্রাম । এজন্য পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আরো তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

(দ্য রিপোর্ট/এজে/জুলাই ২৮, ২০১৭)