দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে রাঘব বোয়ালরা জড়িত থাকলেও তদন্তে দুর্বলতার কারণে তাদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রক্তদান কর্মসূচিতে সুপ্রিম কোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকে আমাদের ইতিহাসের একটি মর্মান্তিক দিন। বাংলার মানুষ স্বাধীনতার স্থপতিকে শুধু হারায়নি, তার বিশ্বাস, তার ভবিষ্যৎ সবাইকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। এই উপমহাদেশের দুই জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। একজন মহাত্মা গান্ধী, আরেকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু এই দুই মহান নেতার মৃত্যুর কারণ কিন্তু দুটো।’

তিনি বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল, তিনি পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যে রায়ট লেগেছিল এবং পশ্চিমবঙ্গ-পাঞ্জাবে রক্তের বন্যা বয়েছিল। কোনোমতেই উনি সরকারকে, নেহরু প্রধানমন্ত্রী; তাকে বলেছিলেন রায়ট বন্ধ করতে। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। উনিও অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু করেন নাই।’

এসকে সিনহা বলেন, ‘রায়টের সময় পশ্চিমবঙ্গে শুধু ১০ লাখ লোক মারা যায় এর মধ্যে ২ লাখের উপর মুসলমান মারা যায়। এরপর মহাত্মা গান্ধী আমরণ অনশনে বসলেন এবং বললেন এই রায়ট যদি বন্ধ না করা হয় আমি অনশন বন্ধ করব না। ভারত সরকার তখন সজাগ হলো, রায়টটা বন্ধ হয়ে গেল। হিন্দু উগ্রবাদী মথুরাম গোৎসে সহ্য করতে না পেরে তাকে হত্যা করলো। এটা সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতা, অন্ধ বিশ্বাস।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড হলো কাপুরুষোচিত। বঙ্গবন্ধু হয়তা কারো শত্রু বা কারো বিরাগভাজন হতে পারেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চার বছরের ছেলে রাসেল, বঙ্গবন্ধুর দুই ছেলে সদ্য বিবাহিত, আজকে পত্রিকায় পড়লাম তাদের গায়ে হলুদ হয়েছিল..। এদেরকে সম্পূর্ণ পরিবারকে ধ্বংস করা। তার ছোটো ভাই ছিল, শেখ রাসেল কিন্তু কোনো পলিটিক্সে ছিলেন না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সমস্ত পরিবারকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা।’

তিনি বলেন, ‘এটার সঙ্গে পৃথিবীর কোনো হত্যার মিল পাওয়া যায় না। আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই যেরকম তারা হত্যা করেছিল। আরও কষ্টদায়ক হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে হত্যাকারীদের রাষ্ট্রের আইন দ্বারা বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি এই বিচার বিভাগের একজন সদস্য হিসেবে অত্যন্ত গর্ববোধ করছি এই সুপ্রিম কোর্টই ইনডেমনিটি অডিন্যান্স বাতিল করে এই বিচারের রায় প্রশস্ত করেছিল।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই মামলাতে একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। আমি আপিল বিভাগের যখন কনিষ্ঠ বিচারক, প্রকৃতপক্ষে আমি তখন অসুস্থ ছিলাম। সিঙ্গাপুরে তখন ক্যানসারের ট্রিটমেন্ট চলছিল। ট্রিটম্যান্টে থাকাকালে মামলাটির বিচারের জন্য বেঞ্চ গঠন করা নিয়ে প্রবলেম হয়েছিল, তখনই আমাকে অনুরোধ করা হয় যে, তাড়াতাড়ি চলে আসেন। তখনও আমি জানি না, আমি বাঁচতে পারব কিনা।’

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ১৫ , ২০১৭)