গাইবান্ধায় বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য সংকটে দুর্ভোগে মানুষ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৩০ ইউনিয়নের পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষের রাত কাটছে নির্ঘুম। তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট। এছাড়া পয়নিষ্কাশন সমস্যাসহ পানিবাহিত রোগ দেখা দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন মানুষরা।
গত ৬ দিন ধরে এ অবস্থা চললেও দুর্গতরা পাননি ত্রাণ সহায়তা বা চিকিৎসা সেবা। তবে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গত মানুষের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। টাকা ও চাল দ্রুত বিতরণ করা হবে। এছাড়া বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রক্ষপুত্র-যমুনা নদীর পানি অপরিবর্তীত রয়েছে। বুধবার সকাল ৬টায় ব্রক্ষপুত্র-যমুনা নদীর পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া করতোয়া নদীর পানি কাটাখালি পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ব্রিজরোড় পয়েন্টে ৮৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান।
এদিকে, পানির প্রবল তোড়ে গত দুইদিনে করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ৫টি পয়েন্টে ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় অন্তত ৪০ গ্রামের বাড়িঘরসহ ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া তলিয়ে গেছে আমন ধানের জমি, বিভিন্ন ফসলি জমি, পুকুর ও মাছের ঘের।
এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়া-রতনপুর, কাতলামারী ও শহর রক্ষা বাঁধের আরও ৫টি পয়েন্ট। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁধ ভেঙে গেলে জেলা শহর পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এতে করে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিবে। ফলে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বানভাসীদের মধ্যে শুকনা খাবারসহ ত্রাণ পৌঁছানো একেবারে জরুরি হয়ে পড়েছে। জেলার বন্যা কবলিত এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা ফুলছড়ি। এ উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। বন্যায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়িঘর স্থাপনসহ ঋণ সহায়তা দিতে সরকারের নিকট দাবি জানান’।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে জানান, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রবল চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয়দের সহায়তায় এসব স্থানে বালির বস্তা ফেলে মেরামতের চেষ্টা করছে। এছাড়া বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহীনির কারিগরি দলের ৮৫ সদস্য কাজ করছেন। গত দুই দিন ধরে শহর রক্ষায় ডেভিট কোম্পানি পাড়ার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের নিচের গর্ত দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়দের সহায়তা গর্ত বন্ধ করা হয়। এ কারণে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েই চলছে’।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ পাল দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘দুর্গত মানুষের জন্য তাদের হাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। দ্রুত বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবারসহ নগদ টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে। এছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া পানিবাহিত রোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে’।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ১৭, ২০১৭)