চাঁদপুরে তালের নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর
চাঁদপুর প্রতিনিধি : বর্ষা এলেই গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়ে শাপলা তোলা, নদী ও খাল পার হয়ে গরুর ঘাস কাটতে যাওয়া, একবাড়ি থেকে অন্যবাড়ি যাওয়ার কাজে প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার হতো তালের নৌকা। এখনও সে নৌকার কদর অনেকাংশে রয়েছে।
চাঁদপুরে এক সময়ের এই ঐতিহ্যবাহী তালের নৌকার কদর এখনও কমেনি। এখন বর্ষার আগমনে এ তালের নৌকার অনেক চাহিদা দেখা দিয়েছে। তালের নৌকা তৈরীর কারিগরদের নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এখন এ তালের নৌকার ঐতিহ্য অনেক স্থানে হারিয়ে যাচ্ছে। আর তালের নৌকা তৈরীর কারিগররাও পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন। সারাদেশেই তালের নৌকার কম-বেশি ব্যবহার প্রচলন ছিলো। এর মধ্যে চাঁদপুরের সদর ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় তালের নৌকার কদর ছিলো বেশি। পাশপাশি হাজীগঞ্জ বাজারে ছোট সাইজের নৌকাও বিক্রি হত।
সরেজমিন হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার দেবপুর নামক স্থানে তালের নৌকা তৈরী কারিগরদের সাথে কথা হয়। ওই এলাকায় পূর্বে ২০ থেকে ২৫ জন কারিগর কাজ করলেও তালের নৌকার চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন মাত্র ১০-১২জন কাজ করছেন।
কারিগর লোকমান কবিরাজ বলেন, ‘আগে বর্ষা এলে প্রতি বছর ২ থেকে ৩ হাজার তালের নৌকা বিক্রি হয়েছে। এখন ২শ’ নৌকাও বিক্রি হচ্ছে না। এর বড় কারণ হচ্ছে গ্রাম-গঞ্জে অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও বহু বছর এ পেশায় ছিলেন, সেই কারণে আমরাও করছি। তবে এখন তালের নৌকার কদর অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। আমরাও পাশাপাশি কৃষিসহ অন্যান্য কাজে দৈনিক হাজিরায় কাজ করে বেশি অর্থ পাচ্ছি। যার ফলে তালের নৌকা তৈরীতে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।’
হাজীগঞ্জ উপজেলার চতন্তর হাওলাদার বাড়ীর হাশু হাওলাদার জানান, ‘তারা প্রতিটি তাল গাছ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। এর মধ্যে নিচের অংশ দিয়ে দু’টি তালের নৌকা তৈরি হয়। আর এসব তালের নৌকা বিক্রি করেন ৪ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। পুরনো তালগাছ দিয়ে তৈরী তালের নৌকা টেকসই বেশি। কমপক্ষে ২০ বছর ব্যবহার করা যায়।’
দেবপুর চরবাকিলা গ্রামের কিশোর জাবেদ জানান, ‘আগে তাদের বাড়ীর অনেকেই তালের নৌকা ব্যবহার করতো। এখন আর করেন না। সে প্রতিদিন গরুর ঘাস কাটার কাজে তালের নৌকা ব্যবহার করেন। তালের নৌকায় ২ থেকে ৩ জন বসতে পারে। তবে বেশি নড়া-চড়া করলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
তালের নৌকা বিক্রেতা সুরুজ বেপারী জানান, পর্যায়ক্রমে এক সময় তালের নৌকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এখন ক্রেতাদের আগমন কম। তবে বন্যা হলে আবার বিক্রি বেড়ে যায়। আমাদের তালের নৌকা বেশির ভাগ নোয়াখালী জেলার লোকজন ক্রয় করেন। এছাড়া স্থানীয় ভাবে হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর সদর উপজেলায় বিক্রি হয়। তালের নৌকার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ এগিয়ে আসে না। আমরা নিজেদের উদ্যোগেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। তবে এখন বর্ষার আগমনে তালের নৌকার চাহিদা বেশি হবে বলে আশংকা রয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/আগস্ট ১৯, ২০১৭)