নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের সিংড়া ও নলডাঙ্গায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সিংড়া পৌর শহরসহ ৬টি ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে শোলাকুড়া দাখিল মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছে বানভাসী মানুষরা। বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বন্যার্তদের জন্য সিংড়া দমদমা সরকারি গার্লস, পাঙ্গাশিয়া, কতুয়াবাড়ী, নিংগইন ও জোড়মল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বিলচলন ও মহেশচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শোলাকুড়া আলিম মাদ্রাসায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বন্যা দুর্গতদের জান-মাল রক্ষার্থে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছেন।

অপরদিকে, জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার বারনই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার, বাশিলা পূর্ব পাড়া, দক্ষিণ পাড়া, বিলজোয়ানী, পাটুল, ভুষনগাছাসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে হয়ে পড়েছে। নলডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় আড়াই হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জরুরী তালিকা তৈরী করে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বন্যার কারণে সিংড়া, গুরুদাসপুর এবং নলডাঙ্গায় গত ৫দিনে পানিতে ভেসে গেছে আট শতাধিক পুকুরের মাছ। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১২কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে সব পুকুর এখনও নিমজ্জিত হয়নি সে সব পুকুরের মাছ রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চাষীরা।

মাছ চাষীরা বলছেন, বন্যার কারণে পুকুরের মাছ বন্যার পানির সাথে ভেসে গেছে। এতে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ২২হাজার পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে সিংড়া উপজেলায় ৬ হাজার পুকুরের মধ্যে বন্যার পানিতে এখন পর্যন্ত ৭ শতাধিক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১১কোটি ২৮লাখ টাকা। এছাড়া নলডাঙ্গা উপজেলায় বারনই নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ৬০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এই উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭লাখ ২০ হাজার এবং গুরুদাসপুরে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৪১টি পুকুরের মাছ। যার ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে সাড়ে ৬লাখ টাকা।

সিংড়া উপজেলার ভাগনাগরকান্দি গ্রামের মাছ চাষী আবুল কালাম বলেন, তার ৫টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে মোটামুটি ১০লাখ টাকা তার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকলে অন্য ৫টি পুকুরের মাছও ভেসে যাবে।

আরেক মাছ চাষী হোসেন আলী জানান, হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে তার ২টি পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভাবে ভেসে গেছে। এতে তার ৮লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকারি ভাবে কোন আর্থিক সহায়ত না পেলে এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা তার জন্য কঠিন হবে।

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষীদের তালিকা তৈরী করছেন। বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ভেসে যাচ্ছে নতুন নতুন পুকুরের মাছ। এতে চাষীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এসব ক্ষতিগস্থ মাছ চাষীদের তালিকা তৈরীর পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/আগস্ট ২০, ২০১৭)