চাঁদপুর প্রতিনিধি : কফিনের সামনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের নিন্দিত আনন্দ আর হাসি। এমন অপ্রাসঙ্গিক ছবিটি এখন সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে স্থানীয়ভাবে ভাইরাল হয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। হাসিতে মাতম চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুর রশিদ মজুমদার।

ওই ছবিতে রয়েছেন হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.স.ম মাহবুব-উল-আলম লিপন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাঈনুদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহম্মদ খসরু ও সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফারুক মুরাদসহ কয়েকজন।

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রব মিয়ার ৪র্থ ছেলে রেজওয়ানুর রব রাজু (৪৫) এর মরদেহের কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে এই নিন্দিত উপহাস করেন।

ঘটনাটি গত ২২ আগস্ট মঙ্গলবার হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ প্রাঙ্গণ মরহুমের দ্বিতীয় জানাজায় ঘটে।

এমন নিন্দিত উপহাস নিয়ে শুক্রবার ২৫ আগস্ট সকালে ‘অবিবাহিত ছাত্রলীগ’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। ছবির ক্যাপশনে আইডিতে বলা হয়েছে, ‘ আমরা কোন যুগে বাস করছি...সাবেক এমপি রব সাহেবের ৪র্থ পুত্র রাজুর কফিনে ফুলের শ্রদ্ধা নাকি হাসির বাক্স উপহার দিচ্ছেন গুটি কয়েক আওয়ামী নেতা।’

তাৎক্ষণিক কি কারণে কফিনের সামনে নিন্দিত হাসি- জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.স.ম মাহবুব-উল-আলম লিপন বলেন, ‘হাজীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মামুন সবাইর লোক বলে নিজেকে দাবী করেছিলেন। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মজুমদারসহ গুটিয়ে কয়েকজন হাসতে লাগলেন। আমি তাৎক্ষণিক হাসি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।’

এমন ঘটনা প্রসঙ্গে এই জনপ্রতিনিধি পৌর মেয়র বলেন, ‘কফিনের সামনে হাসিটি সত্যিই দুঃখজনক। মানুষের মূল্যবোধ থাকা উচিত। এমন কাজকে আমি ঘৃণা জানাই।’

এ বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রব মিয়ার বড় ছেলে খালেদুর রহমান মিঠু বলেন, ‘ব্যক্তিত্ব একটা নিজস্ব জিনিস। কাউকে শিখাতে হয় না। যে বিষয়টি ফেসবুকে মাতামাতি চলছে- সেই ছবিটা দৃষ্টিকটু। ভদ্রতা ‘কার্টিসি’ বলতে নাই। আমার ভাই তুখোড় ছাত্র নেতা ছিল। ’৯৬ সালে নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। এই আবদুর রশিদ সাহেবের নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছিলেন আমার ভাই।’

তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, ‘তারা ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে যায়। আমার বাবা সাবেক সাংসদ আবদুর রবের হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছেন তিনি। অথচ তিনি আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী মিলাদে আসেননি। বাকী সব নেতারা এসেছিলেন। তিনি সবই ‘ভুইল্লা’ গেছেন।’

গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৬টায় চাঁদপুরের একটি হাসপাতালে রেজওয়ানুর রব রাজু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি মৃত্যুকালে ১ মেয়ে, স্ত্রী, মা, ভাই-বোনসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে যান। মঙ্গলবার চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জে তিন দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাক দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি চাঁদপুরের হাইমচরে শিক্ষার্থীদের উপর ‘মানবসেতু’ তৈরি করে হাঁটার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটওয়ারী। অবশেষে ওই উপজেলা চেয়ারম্যানকে আদালতের কাঠগড়ায় যেতে হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এজে/এনআই/আগস্ট ২৫, ২০১৭)