ময়মনসিংহে নিহত জঙ্গির স্ত্রী-শিশুসহ আটক ৭
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ভালুকা হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর গ্রামে রবিবার সন্ধ্যায় বোমা বিস্ফোরণে এক জঙ্গি নিহতের ঘটনার ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। নিহত জঙ্গি আলম প্রামাণিক নব্য জেএমবি’র সুইসাইডাল স্কোয়াডের সদস্য এবং কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। তিন দফায় তাকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। ভালুকার এই আস্তানাটি ছিলো বোমা তৈরির কারখানা। এখান থেকেই সারাদেশে আসন্ন ঈদে বোমা সরবরাহের কথা ছিল। অভিযানে বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
সোমবার বিকেল ৩টায় ঘটনাস্থলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন ময়মনসিংহ পলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
এদিকে রবিবার বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে ওই জঙ্গি নিহতের ঘটনায় সন্ধ্যা থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ঘিরে রাখা ওই বাড়িটি। ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোমানিষ্ক্রিয় দলের সদস্যরা সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পৌঁছে বিকেল ৩টায় উদ্ধারকাজ সমাপ্ত করেন। জঙ্গি আস্তানা থেকে নিহত জঙ্গির রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেন। এসময় ওই ঘরটি থেকে ১টি গ্রেনেড, ২টি প্রেসার কুকার বোমা ও ৪টি শক্তিশালী তাজা বোমা, বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম এবং বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে। পরে বোমানিষ্ক্রিয় দলের সদস্যরা সবগুলো বোমা নিষ্ক্রিয় করেন।
এদিকে বোমা বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গির নাম-পরিচয় পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। তার নাম আলম প্রামানিক। বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার তেলকুপি গ্রামে। বিস্ফোরণের পর নিহত জঙ্গির দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যাবার আড়াইঘণ্টা পর হবিরবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের আটক করে পুলিশ। এছাড়া বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিন, তার স্ত্রী ও দুই পুত্রকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।
রবিবার সন্ধ্যার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কাশর গ্রামের আজিম উদ্দিনের বাড়ির ভাড়াটিয়ার একটি ঘরে বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বোমার আঘাতে আলম প্রামানিক (৩৫) নামে এক জঙ্গি মারা যায়। বোমায় তার দুই হাতের কব্জি উড়ে গেছে। রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তার দেহ। বোমার স্প্লিন্টারে আহত হয় দুই শিশু সন্তানও। স্ত্রী ফাতেমা বেগম এসময় ঘরের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্ত্রী ফাতেমা বেগম আহত দুই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে যাবার কথা বলে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। খবর পেয়ে র্যাব-পুলিশসহ আইশৃঙ্খখলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থল পৌঁছে বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। এখবর ছড়িয়ে পড়লে হাজারো উৎসুক জনতা ভিড় জমান। রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি, জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান, র্যাব-১৪ কমান্ডার লে. কর্নেল শরিফুল হক, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।
সকালে বেলা ১২টার দিকে ঢাকা থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয় দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। ফলে ২০ ঘণ্টার পর উদ্ধার কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী।
এদিকে বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিন জানান, গত ২৩ আগস্ট সে আধাপাকা ঘরটি ভাড়া নেয় গার্মেন্টস ব্যবসায়ি আব্দুল্লাহ পরিচয়ে। তার বাড়ি কুষ্টিয়া বলে জানায় সে।
(দ্য রিপোর্ট/এপি/আগস্ট ২৮, ২০১৭)