পবিত্র হজ আজ
লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: সৌদি আরবে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র হজ বৃহস্পতিবার (৯ জিলহজ, ৩১ আগস্ট) পালন করবেন। 'লাব্বাইক, আল্লাহুমা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি' মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক।' অর্থাৎ 'আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।' এই ধ্বনিতে বৃহস্পতিবার মুখর হবে আরাফাতের ময়দান।
আরাফাতের ময়দানে জোহরের নামাজ শেষে খুতবায় অংশ নেন মুসল্লিরা। এরপর তাঁরা আসরের নামাজ আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে খোলা মাঠে অবস্থান করবেন। শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করবেন সেখান থেকে।
পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও হজ পালনে এবার বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ২০ লাখের বেশি মুসল্লি সমবেত হয়েছেন। এর মধ্যে এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজারের বেশি মুসলমান হজব্রত পালন করছেন। সুষ্ঠুভাবে হজ পালনে সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খবর- এএফপি, আলজাজিরা, সৌদি গেজেটের।
'হজ' শব্দের আভিধানিক অর্থ 'ইচ্ছা করা'। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ একটি। হজ অবস্থাপন্ন শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় ইবাদত। জীবনে অন্তত একবার হজ পালনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে। কাবাকেন্দ্রিক মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ভাবা হয় এই ইবাদতকে। জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা হজ পালনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এ সমাবেশে দুনিয়ার সব প্রান্ত থেকে নানা জাতির, নানা বর্ণের নানাভাষী মুসলমানরা সমবেত হয়েছেন মহান আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে। হজ পালনের মাধ্যমে মহান স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসীদের আনুগত্য যেমন প্রকাশ পায় তেমন দেহ ও মনকে আল্লাহমুখী করা সম্ভব হয়।
এ ইবাদতের মাধ্যমে মুমিনরা আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়। হজব্রত পালনের মাধ্যমে বান্দা অতীতের ভুলত্রুটির জন্য মহান আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করে এবং নিষ্পাপ হওয়ার সুযোগ পায়। হজের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। নানা ভাষার নানা বর্ণের নানা জাতির লাখ লাখ মানুষ একই ধরনের পোশাক পরে আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পিত করে। হজ উপলক্ষে মানব জাতির যে মহামিলন ঘটে তা বিশ্বজুড়ে সৌহার্দের পরিবেশ গড়ে তুলতে অনুপ্রেরণা জোগায়। বিশ্ব শান্তি ও পারস্পরিক সহমর্মিতার শিক্ষা দেয় এই ইবাদত।
পবিত্র হজ পালনে মুসল্লিরা মঙ্গলবার রাত থেকে মিনায় পৌঁছাতে শুরু করেন। বুধবার সারাদিন তারা মিনায় অবস্থান করেন। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজ আদায় করে তারা রওনা হবেন আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে।
আরাফাতের ময়দানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে সারাদিন হাজিরা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকবেন। সাদা ইহরাম বাঁধা অবস্থায় লাখ লাখ হাজির পদচারণায় আরাফাতের ময়দান পরিণত হবে এক শুভ্রতার সমুদ্রে। হজের খুতবা শুনবেন এবং এক আজানে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা।
সন্ধ্যায় তারা মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে আবারও এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। সেখান থেকে জামারায় (প্রতীকী শয়তান) নিক্ষেপের জন্য কঙ্কর (ছোট পাথর) সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন তারা।
১০ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য রওনা দেবেন মুসল্লিরা। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার আগে জামারাতুল আকাবায় (বড় শয়তান) ৭টি পাথর নিক্ষেপ করা হবে। জামারাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পর আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তারা পশু কোরবানি করবেন। এরপর মাথা মুণ্ডন করে এহরাম খুলে অন্য পোশাক পরবেন। একে তাহালুলে আসগর বলা হয়। তারপর তাওয়াফে ইফাদা (কাবাঘর তাওয়াফ) এবং সায়ি (সাফা-মারওয়ায় সাত চক্কর) শেষ করে ফের মিনায় ফিরে যাবেন।
১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে সূর্য হেলে পড়ার পর প্রতিদিন ছোট, মধ্য ও বড় জামারায় পাথর নিক্ষেপ করে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করবেন হাজিরা। যারা ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করতে পারবেন না, তারা ১৩ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করবেন এবং জামারায় ১১ ও ১২ তারিখের মতো পাথর নিক্ষেপ করবেন।
হজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সৌদি আরব সরকার। নিয়োগ করা হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার নিরাপত্তাকর্মী। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মুসল্লি হজ পালন করতে গেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ৩১, ২০১৭)