টাঙ্গাইলে তরুণী গণধর্ষণের পর হত্যা: চালক-সুপারভাইজারে জবানবন্দী
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আরো দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায় জবানবন্দি দিয়েছে বাসের চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফর।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মধুপুর আমলী আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক গোলাম কিবরিয়া এই দুই আসামির জবানবন্দী রেকর্ড করে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে ওই বাসের তিন হেলপার আকরাম, শামিম ও জাহাঙ্গীর মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদেরও জেলহাজতে পাঠানো হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেয়া বর্ণনায় চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফর ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের পরিচালিত ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের বাসে ওঠেন ওই তরুণী। ওই তরুণী ছাড়াও বাসে আরো পাঁচ-ছয়জন যাত্রী ছিল। বাসে থাকা অন্য সব যাত্রী সিরাজগঞ্জ মোড়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত ও এলেঙ্গায় নেমে যায়। তরুণীর সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় তিনিও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় নেমে যান। তবে ওই বাসেই ময়মনসিংহে পৌঁছানোর কথা ছিল ধর্ষিত ও হত্যার শিকার তরুণীর। এরপর বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাস চালকের সহকারী শামীম তরুণীকে জোর করে পেছনের আসনে নিয়ে যান। এ সময় তরুণীটি তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মুঠোফোন শামীমকে দিয়ে তাকে নির্যাতন না করতে হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। কিন্তু শামীম কোনো কথাই শোনেননি। পরে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর জোড়পূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষিতা তরুনী কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করায় তারা তিনজন তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে তাকে হত্যাও করে তারা। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকায় রাস্তার পাশে ওই তরুনীর মরদেহটি ফেলে রেখে চলে যান তারা।
সোমবার রাতে ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত এই পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা পাঁচজনেই স্বীরোক্তিতে গণধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। এই পাঁচ আসামির বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা এলাকায়। বগুড়া-ময়মনসিংহ সড়কে চলাচলকারী ‘নিরাপদ’ পরিবহনের ‘ছোঁয়া’ নামে বাসে এই অনিরাপদ ও ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা আইডিয়াল ল’ কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে (২৭) গত শুক্রবার রাতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর নৃশংশভাবে হত্যা করে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ টাঙ্গাইলের মধুপুর জঙ্গলে ফেলে দেয় ওই পাঁচ পাষন্ড। পুলিশ ওই কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করে। পরবর্তীতে লাশ শনাক্তের পর রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান থানায় মামলা দায়ের করেন।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ৩১, ২০১৭)