ঈদ মোবারক
আজ আনন্দের দিন, কোরবানির দিন
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বছর ঘুরে আবার ফিরে এল পবিত্র ঈদুল আজহা। যে দিনটি মুসলমান জাতির জন্য আনন্দের দিন, যে দিনটি কোরবানি তথা আত্মত্যাগেরও দিন।
ঈদুল আজহা মূলত আরবী বাক্যাংশ।এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব।আসলে এটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দেয়।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) যথাযথ মর্যাদা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ ও উৎসবের আমেজে বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সকালে ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে পালন করবে অন্যতম বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব।
ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, মহান আল্লাহপাক নবী হযরত ইব্রাহিম(আ.)-কে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানি করার নির্দেশ দেন। এই আদেশ অনুযায়ী হযরত ইব্রাহিম(আঃ)তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে উদ্যত হন। তার এমন ভক্তি দেখে খুশি হন আল্লাহপাক এবং ইব্রাহিম (আ.)-কে পুত্রের পরিবর্তে পশু কুরবানির নির্দেশ দেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে থেকে কোরবানির ঈদের প্রচলন হয়। এ ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন প্রতি বছর এই দিনটি পালন করে।
হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আজহা চলে। হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অণুযায়ী ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে। দিনের হিসেবে যা সবোর্চ্চ ৭০ দিন হতে পারে।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) উদাযাপিত হয়েছে ঈদুল আজহা। সৌদির সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক মানুষ শুক্রবার নামাজ আদায় ও পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন। তবে জাতীয়ভাবে শনিবার দেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা।
এ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টায় রাজধানী ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এটিসহ দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রাজধানী ৪০৯টি স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা-পাড়া-মহাল্লায় মসজিদগুলোতে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচল করবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও এ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। এ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঈদের দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গিয়েছেন এবং অনেকে যাচ্ছেন।
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআরটিসি, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি), বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য বেসরকারি পরিবহন সংস্থা বিপুলসংখ্যক যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
পবিত্র এ দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারী ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সকল কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোম্স, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
হজরত ইবরাহিম (আ.) পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আল্লাহপাকের নির্দেশে তিনি জীবদ্দশায় প্রতি বছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তার জীবদ্দশায় প্রতি বছরই কোরবানি করেছেন এবং তার উম্মতদের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
এ আদর্শ অনুসরণের লক্ষ্যে গোটা মুসলিম জাহানের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ঈদ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
কোরবানির পশু কেনার জন্য গত কয়েকদিন যাবত গাবতলী পশুর হাটসহ রাজধানী ও এর আশপাশের অস্থায়ী পশু হাটগুলোতে ক্রেতাদের বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সাধ্য ও সামর্থের মধ্যে পছন্দের গরু, ছাগল বা অন্য কোনো হালাল পশু কেনার জন্য হাটে হাটে ঘুরছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
পবিত্র এ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এ ছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদ্যাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদ্যাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল আজহা উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সাথে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনে ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৭)