মিরপুরে ‘জঙ্গি অস্তানায়’ ফের অভিযান
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডের বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট ‘কমলপ্রভা’ নামের বাড়িতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) চর্তুর্থ দিনের অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে কাজ করছে র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ অভিযান শুরু হয়। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বিভিন্ন গণমাধ্যমকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর অগে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টা থেকে ঘিরে ফেলা হয় রাজধানীর মিরপুরের মাজার রোডে বাঁধন সড়কের বর্ধনবাড়ি এলাকার ভাঙ্গাওয়াল গলির ছয়তলা বিশিষ্ট ওই বাড়িটি। বাড়িটিতে দুই স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীসহ দুর্ধর্ষ জঙ্গি আব্দুল্লাহ অবস্থান করছিল। সেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকও মজুদ করে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের আত্মসমর্পণ করার কথা থাকলেও মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণ সন্দেহভাজন জঙ্গিদের দেহ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আসবাবগুলোর মাঝে ৭টি মাথার খুলি আর কিছু হাড় পাওয়া গেছে। হাড়-খুলি গুনে সাতজন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে র্যাব। তবে ছোট মাথার খুলি ছাড়া অন্যান্য খুলি দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা করা।
র্যাব বলছে, মঙ্গলবার যে বিস্ফোরণ হয়েছে তা রাসায়নিক দিয়ে ঘটানো হয়েছে। বিস্ফোরণের চাপে পাঁচতলার মেঝে ও ছাদ পর্যন্ত ফেটে গেছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা আবদুল্লাহ, তাঁর দুই স্ত্রী ফাতিমা ও নাসরীন, দুই শিশুসন্তান ওসামা (১০) ও ওমর (৩) এবং আরও দুজন। বাকি দুজন আবদুল্লাহর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার বেলা সোয়া তিনটার পরে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার রাতে যে বিস্ফোরণটি ওই ফ্ল্যাটে ঘটেছে তা ছিল ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণ। সেখানে পেট্রল, অ্যাসিডসহ বোমা বানানোর জন্য যে রাসায়নিক মিশ্রণের প্রয়োজন হয় তার সবকিছুই সেখানে ছিল। সব মিলিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি ঘটায় জঙ্গিরা। তিনি বলেন, পাঁচতলা ফ্ল্যাটে যেখানে প্রধান বিস্ফোরণটি ঘটানো হয় সেই মেঝেতে চার বর্গফুটের একটি গর্ত তৈরি হয়ে গেছে। ওই গর্ত দিয়ে তরল রাসায়নিক নিচে গড়িয়ে চারতলার ফ্ল্যাটেও আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের যে ভয়াবহতা ছিল তা আধা কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, ওই ফ্ল্যাটে সাতটি খুলি পাওয়া গেছে। দেহগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখানে-ওখানে দু-একটি হাড় দেখা যায়। খুলি দেখেই সাতটি দেহ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর ডিএনএ নমুনা রাখা হবে। সেখানে আবদুল্লাহ, তাঁর দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও তাঁর দুজন কর্মচারী নিহত হয়েছেন বলে মনে হয়।
তিনি বলেন, র্যাবের চেষ্টা ছিল নিরপরাধ নারী ও শিশুদের বাঁচাতে। কিন্তু জঙ্গিদের খুনে মানসিকতার কাছে তাদের সন্তানও নিরাপদ নয়। এ ছাড়া আবদুল্লাহর খামারের অনেকগুলো কবুতর ওই বিস্ফোরণে মারা গেছে। আরও কতগুলো আহত হয়েছে। র্যাব সদস্যরা সে কবুতরগুলোকেও বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
বুধবার সকাল থেকে বাড়িতে তল্লাশি শুরু হয়। খুলিসহ অন্যান্য যে আলামত আছে সেগুলো সংগ্রহের জন্য র্যাব ও সিআইডির ফরেনসিক দল কাজ করছে। ভাড়াটেদের ঘরও তল্লাশি হবে। ভবনের অবস্থা দেখে মনে হয় চার ও পাঁচতলা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি বসবাসযোগ্য কি না তা পরে প্রকৌশলীরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান বেনজীর আহমেদ।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৭)