‘যদি সামনের দিনগুলো খুন করে ফেলতে পারতাম!’
আবু হেনা মোস্তফা এনাম মূলত গল্প লেখক। সম্পাদনায়ও সিদ্ধহস্ত। এবারের বইমেলায় তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এনামের গল্পগ্রন্থের তালিকায় রয়েছে-ক্রশকাঠের খণ্ডচিত্র অথবা অভাবিত শিল্পপ্রণালী [ধারাপাত, ২০০৫], নির্জন প্রতিধ্বনিগণ [সাহিত্য প্রকাশ, ২০১০], প্রাণেশ্বরের নিরুদ্দেশ এবং কতিপয় গল্প [ধ্রুবপদ, ২০১১]। লেখকের সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মাহমুদুল হকের অগ্রন্থিত গল্প [সাহিত্য প্রকাশ, ২০১০] ও আলোছায়ার যুগল বন্দি [মাহমুদুল হক স্মরণে, সাহিত্য প্রকাশ, ২০১০]।
প্রথম উপন্যাস, বইমেলাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হোসেন শহীদ মজনু
এবার মেলায় কী কী বই আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?
এবারের বই মেলায় আমার প্রথম উপন্যাস ক্রনিক আঁধারের দিনগুলো প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশ করেছে নান্দনিক।
ক্রনিক আঁধারের দিনগুলো সম্পর্কে বলুন?
উপন্যাসের প্রচ্ছদ করেছে কামরুজ্জোহা। উপন্যাসে একজন কবির ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতা এবং সমাজ ও রাষ্ট্র-রাজনীতির ধারাবাহিক অসঙ্গতিপূর্ণ ঘটনা কীভাবে তার জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে তারই রূপায়ণ। কবি তাহের ওসমানের একমাত্র মেয়ে অটিস্টিক।
সে কথা বলতে পারে না। তাহের ওসমান দেখে চারপাশের আরও অনেকে দুরুহ অটিজমে আক্রান্ত- কেউ কথা বলতে পারে না, কেউ অন্ধ, বধির অথবা অশোভন ভাষায় কথা বলাও তার কাছে অটিজমের রূপক মনে হয় এবং তার এক সময় মনে হয় পুরো সমাজই ভয়াবহ অটিজমে আক্রান্ত। কিন্তু এ উপন্যাস শেষ পর্যন্ত নৈরাশ্যের ভেতরে সমাপ্ত হয়নি, কবি তাহের ওসমান অনেক মানসিক সংকট ও অস্থিরতার মধ্যেও সৌন্দর্য ও জীবনের সম্ভাবনার দিকে লাজুক পায়ে হেঁটে যায়।
প্রকাশনার কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা থাকলে বলুন?
নান্দনিক প্রকাশনীর যারা বই প্রকাশের বিষয়টি দেখভাল করেন, তারা বেশ সহযোগিতাই করেছেন। ইতোমধ্যে আমার ৩টি গল্পের বই প্রকাশিত হলেও আমি তাদের কাছে অপরিচিতই ছিলাম। ফলে একেবারে আনকোরা, অপগণ্ডই বলা চলে, আমার উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি তারা দেখেন এবং পরদিনই ফোন করে বেশ উচ্ছ্বসিত হন। তাদের উচ্ছ্বাস থেকে আমি বুঝতে পারি, তারা পাণ্ডুলিপিটি গ্রহণ করেছেন। পরে আমি পাণ্ডুলিপিতে বেশ কয়েকবার সামান্য রূপান্তর করি, কিন্তু সেটা করতেও আমাকে কোনো অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়নি।
বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?
বই কেনার ব্যাপারে বরাবরই আমি খুব চ্যুজি। আমার সাহিত্যরুচির সঙ্গে না মিললে আমি সাধারণত বই কিনতে চাই না। তবে কখনও কখনও বন্ধুকৃত্য করতে আমার রুচির সঙ্গে খুব একটা মেলে না এমন কিছু বই কিনতে হয়। প্রবন্ধের বইয়ের ক্ষেত্রে ভালো বই ভেবে কেনা হল, কিন্তু দেখলাম তা ঠিক চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বইমেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমিতে হতেই তবে, এটা নিয়ে আমরা খুব আবেগে নিমজ্জিত থাকি বলে মনে হয়। এবার বইমেলা দুভাগ হলো, এতে সমস্যাই হয়েছে বলে মনে হয়। একটা বড় জায়গায় একটু ফাঁকা ফাঁকা করে ঘুরে ফিরে দেখে শুনে বই কেনা এবং একই সঙ্গে সকলের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়ত করা সম্ভব। কিন্তু যে আবেগের মধ্যে বাঙালি ডুবে আছে আকণ্ঠ সেখান থেকে তাদের কে টেনে তুলবে?
কেন লেখেন।
লিখি একেবারেই নিজের আনন্দের জন্য। এ জন্য লেখার [বিশেষত ভাষা ও আঙ্গিক সম্পর্কিত] বিষয়ে কারো পরামর্শ খুব একটা গ্রাহ্যের মধ্যে আনি না। অবশ্য নিজের আনন্দের জন্য লেখা- কথাটা খুব ক্লিশে শোনায়। এটার অন্য ব্যাখ্যা আমার রয়েছে, সেটা আপাতত খোলসা করতে চাই না।
লেখালেখির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
লিখতে লিখতে খুন হয়ে যাওয়া, খুন হয়ে আবার বাঁচা, বাঁচতে বাঁচতে বাঁচতে আবার মরা, মরে বেঁচে যাওয়ার মধ্যে যদি সামনের দিনগুলো খুন করে ফেলতে পারতাম!
(দ্য রিপোর্ট/এইচএসএম/এএইচ/ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪)