৬৬৫ কোটি টাকার ‘নির্বাচনী প্রকল্প’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটারদের তুষ্টির জন্য ৬৬৫ কোটি টাকার নির্বাচনী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য উঠছে বলে জানা গেছে।
সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন নামের এ প্রকল্প অনুমোদন পেলে সাংসদেরা নিজের এলাকায় পছন্দের মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা, ঈদগাহ, শ্মশানসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ পাচ্ছেন। খেলার মাঠ উন্নয়নেও বরাদ্দ থাকবে। প্রতিটি উপজেলার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী তিন বছরে ১ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
প্রকল্পের পুরো টাকা সরকার নিজস্ব উৎস থেকে দেবে।
এ প্রকল্পটি ছাড়াও সাংসদদের নিজের এলাকায় নলকূপ এবং হাটবাজার উন্নয়নে আরও দুটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা আছে। এ দুই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। এই তিনটি প্রকল্পে ৩ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে এমন প্রকল্প বরাদ্দ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে সাংসদদের সুবিধা দেওয়ার জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এটি পুরোপুরি জনতুষ্টির প্রকল্প। সাধারণত মসজিদ-মন্দিরের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয় জনগণ নিজেদের উদ্যোগেই উন্নয়ন করে থাকে। সরকারের নিজের থেকে এসব প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের খুব বেশি দরকার পড়ে না। প্রকল্প নেওয়া সাংসদদের কাজ নয়; আইন প্রণয়ন করাই তাদের দায়িত্ব। এভাবে স্থানীয় পর্যায়ে প্রকল্পে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে তাদের (সাংসদ) ভূমিকার বিচ্যুতি হচ্ছে।’
সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, কোথায় কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হবে, সেটা ঠিক করবেন স্থানীয় সাংসদ। তবে তিনি স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানাবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ওই সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভবন, দেয়াল নির্মাণ, আসবাবপত্র সরবরাহসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন করে দেবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো উন্নয়নে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাবে।
প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ শুরু হয় গত জুলাই থেকে, বাস্তবায়ন শেষ হবে ২০২০ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর। ৬৬৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে প্রথম দুই বছরে বরাদ্দ আছে ৪১৫ কোটি টাকা। সাধারণত প্রকল্পের মেয়াদের শেষের দিকে বেশি বরাদ্দ থাকে। এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম।
প্রকল্পটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই যৌক্তিকভাবে সাংসদেরাই মসজিদ-মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাছাই করবেন। এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে আমরা আধুনিক ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘এমন ভালো উদ্যোগে দুর্নীতি হবে না। দুই-চারটি দুর্নীতির ঘটনার কারণে আমরা এমন ভালো উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে যেতে পারি না।’
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭)