দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিশিষ্ট লেখক ও নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা আর নেই। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোর পৌনে চারটার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হাসপাতালের ইনভরমেশন ডেস্ক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মৃত্যুকালে দ্বিজেন শর্মার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি স্ত্রী দেবী শর্মা, ছেলে সুমিত্র শর্মা, মেয়ে শ্রেয়সী শর্মাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কিডনি, ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন এই ‘নিসর্গসখা’। অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৩ জুলাই তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে গত বুধবার বিকেলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

দ্বিজেন শর্মা ১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেট বিভাগের বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা সিটি কলেজ থেকে স্নাতক অর্জনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন।

দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেছেন করিমগঞ্জ কলেজ, বিএম কলেজ ও ঢাকার নটরডেম কলেজে।

পরে মস্কোর প্রগতি প্রকাশনে চাকরি করেছেন প্রায় ২০ বছর। এরপর দেশে ফিরে যোগ দেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিতে।

বাংলা একাডেমি, একুশে পদকসহ বিভিন্ন জাতীয় সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই প্রকৃতিপ্রেমিক।

দ্বিজেন শর্মা রাজধানীর অসংখ্য জায়গায় নিজ হাতে গাছ লাগিয়েছেন। তৈরি করেছেন উদ্যান ও বাগান। গাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ এবং প্রকৃতিবান্ধব শহর গড়ার জন্য তিনি আজীবন লড়াই করেছেন।

বাংলাদেশে প্রকৃতি ও নিসর্গবিষয়ক লেখালেখির পথিকৃৎ দ্বিজেন শর্মা। উদ্ভিদ ও প্রকৃতি নিয়ে লেখা তার আকরগ্রন্থ ‘শ্যামলী নিসর্গ’। গাছ, ফুল বা ফলের বর্ণনায় লিখেছেন ময়মনসিংহ গীতিকা, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীনের কাব্য থেকে শুরু করে সিলেটের লোকগীতি, কিংবা মধ্যযুগের কাব্যগাথার উদ্ধৃতি।

তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ‘সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস’, ‘ফুলগুলি যেন কথা’, ‘গাছের কথা ফুলের কথা’, ‘এমি নামের দুরন্ত মেয়েটি’, ‘নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা’, ‘সমাজতন্ত্রে বসবাস’, ‘জীবনের শেষ নেই’, ‘বিজ্ঞান ও শিক্ষা: দায়বদ্ধতার নিরিখ’, ‘ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি’, ‘বিগল যাত্রীর ভ্রমণ কথা’, ‘গহন কোন বনের ধারে’, ‘হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে ডালটন হুকার’, ‘বাংলার বৃক্ষ’ ইত্যাদি।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭)