দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : শ্রদ্ধা-ভালবাসায় নিসর্গবিদ, লেখক, শিক্ষক ও অনুবাদক দ্বিজেন শর্মাকে শেষ বিদায় জানলো সর্বস্তরের মানুষ।

রবিবার (১৭ সপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে এগারটা থেকে দুপুর সাড়ে বারটা পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন,বিভিন্ন্ প্রতিষ্ঠান,সংস্থা,সংগঠন,ছাত্র-ছাত্রীরা প্রয়াত দ্বিজেন শর্মার কফিনে পুস্পার্ঘ অর্পন করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানান । এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে ছায়ানটের শিল্পীরা ‘আগুনের পরশ মণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি পরিবেশন করেন এবং এক মিনিট নিরবতা পালন করে দেশের এই কৃতি সন্তানকে শেষ বিদায় জানানো হয়।

এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় তার মরদেহ বাংলা একাডেমীতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সাড়ে এগারটা পর্যন্ত একাডেমী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন পুস্পার্ঘ অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান। অন্যান্যের মধ্যে একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান,আনোয়ারা সৈয়দ হক,রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ শ্রদ্ধা জানান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নটরডেম কলেজে। এ কলেজে দ্বিজেন শর্মা শিক্ষকতা করেছেন। সেখানে কলেজের শিক্ষক,কর্মকর্তা,কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা জানান। পরে সেখান থেকে রাজধানীর সবুজবাগের রাজারবাগে বরদেশ্বরী কালী মন্দির সংলগ্ন শ্বশানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। শ্বশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবার পর তার চিতাভস্ম সুনামগঞ্জের বড়লেখা উপজেলার কাঠালতলী গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তার স্বরণে সমাধি স্থাপিত হবে বলে জানিয়েছেন দ্বিজেন শর্মার ছেলে সৌমিত্র শর্মা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তার স্ত্রী দেবী শর্মা,মেয়ে শ্রেয়সী শর্মাসহ পরিবারের সদস্যগণ ও আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুস্পার্ঘ অর্পন করেন বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ,কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল,আফজাল হোসেন প্রমুখ। এরপর বিভিন্ন দল,সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে পুস্পার্ঘ অর্পন করেন বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম,অধ্যাপক এম এম আকাশসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ,সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ,কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার,জাতীয় জাদুঘর,মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর,তথ্য অধিদফতর,বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী,চ্যানেল-আই পরিবার,শিল্পকলা একাডেমী,ঐক্য ন্যাপ,কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট,রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়,ভারতেশ্বরী হোমস,মহিলা পরিষদ,গণ সংহতি আন্দোলন,প্রতিবেশ,শিক্ষাবার্তা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন,বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি,এশিয়াটিক সোসাইটি,বার্ড ক্লাব, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর,বিজ্ঞান পাঠশালা,রাশিয়া এ্যালমনাই এসোসিয়েশন,মৌলভীবাজার জেলা সমিতি-ঢাকা,বেঙ্গল ফাউন্ডেশন,প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন,তরু পল্লব,অনিন্দ প্রকাশ,বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি,রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ,ছায়ানট,যুব ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়াও সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার,ড. হায়াৎ মামুদ,নাট্যব্যাক্তিত্ব মামুনুর রশীদ,অধ্যাপক আহমেদ কামাল,আবুল হাসনাত পুস্পার্ঘ অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান।

শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত স্বরণ অনুষ্ঠানে ড. হায়াৎ মামুদ বলেন, ‘মানুষ ও প্রকৃতির জন্য কাজ করেছেন দ্বিজেন শর্মা। পঞ্চাশ বছর তাকে দেখলাম কত রকম কত দিকে সে কাজ করেছে। সে যে পথ দেখিয়ে গেছেন একে অনুস্বরণ করতে পারলেই তার জীবন সার্থক হবে।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘জীবনভর নানামুখী কাজ করেছেন তিনি। সব সময় বিকাশের পথ খুঁজেছেন। নিগর্সবিদ,মানবপ্রেমী,চিন্তক ছিলেন। জীবন দর্শনও গড়েছেন। তিনি যে বৃক্ষরোপন করে গেছেন,সেই সব গাছের পাতারাও তার কথা বলবে। তার দেহান্তর ঘটেছে। কিন্তু তার নিসর্গ,দর্শন ও কাজ আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে।’

সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘শিক্ষক,প্রকৃতিবাদী ও লেখক দ্বিজেন শর্মা জীবনে এতো কাজ করে গেলেন যা একজন মানুষের পক্ষে করা দুঃসাধ্য। কিন্তু তার কাছে কাজই ছিলো মুখ্য বিষয়। মানুষ ও প্রকৃতিকে বাঁচানোর সংগ্রামই ছিলো তার জীবনের অন্যতম সাধনা।’

প্রকৃতি ফাইন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বলেন, ‘তার মৃত্যুতে জাতির অপুরনীয় ক্ষতি হলো। যা পুরন হবার নয়। প্রকৃতি ও মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন তিনি।’

দ্বিজেন শর্মার ছেলে সৌমিত্র শর্মা বলেন, ‘তার কাজের ক্ষেত্র ছিলো বিচিত্রমুখী। জীবনে কখনো পিছু হটেননি। যে কাজ শুরু করেছেন,তা শেষ না করে অন্য কিছু করেননি। জীবনবাদী ও মানবপ্রেমী ছিলেন।’

নিসর্গবিদ,লেখক ও শিক্ষক দ্বিজেন শর্মা গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭)