নোবেল পেলেন মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ৩ সন্ধানদাতা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সর্বপ্রথম মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা দিয়েছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। তবে তিনি এই তরঙ্গের সন্ধান দিতে পারেন নি। সন্ধান দিয়েছেন রেইনার ওয়েইস, ব্যারি ব্যারিস ও কিপস থ্রোন। এই অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৭ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন এই তিন বিজ্ঞানী।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দ্য রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স পদার্থে নোবেল বিজয়ী হিসেবে এই তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করেছে।
পুরস্কারের অর্ধেক সম্মানি পাবেন রেইনার উইস। বাকি অর্ধেক পাবেন ব্যারি বারিস ও কিপ থ্রোন।
এই তিন গবেষক কাজ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং লেজার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অভজারভেটরির (লাইগো- ভিরগো) হয়ে। লাইগো-ভিরগোর এক সংবাদ সম্মেলনে গতবছর ফেব্রুয়ারিতে ব্ল্যাক হোলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) শনাক্ত করার যুগান্তকারী ঘোষণা দেওয়া হয়।
জার্মান পদার্থবিদ আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে তার সাধারণ অপেক্ষবাদ তত্ত্বে এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা দেন, যা স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয়।
এই তরঙ্গ শনাক্ত করা সম্ভব কি না- সে বিষয়ে ১৯৭০ এর দশকেও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না। আবার অনেক তাত্ত্বিক সেসব দিনে ওই তরঙ্গের অস্তিত্বই খারিজ করে দিতেন।
অ্যাস্ট্রোনমি ম্যাগাজিনের এক নিবন্ধ বলছে, আইনস্টাইন নিজেও এক সময় ওই তত্ত্ব ‘ভুল’ বলে ভাবতে শুরু করেছিলেন।
শতবছর পর লাইগো-ভিরগোর গবেষকরা জানান, সূর্যের থেকে প্রায় ৩০ গুণ ভারী দুটি কৃষ্ণ গহ্বরের সংঘর্ষ থেকে উৎপন্ন মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) তারা শনাক্ত করতে পেরেছেন। আর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন ও গবেষণার জন্যেই তিন বিজ্ঞানী এবার নোবেল পেলেন।
রীতি অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে তিন বিজ্ঞানীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনারের অর্ধেক পাবেন ভাইস। বাকিটা থর্ন ও বারিশ ভাগ করে নেবেন।
থ্রোন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। তিনি মহকর্ষীয় তরঙ্গ দেখতে কেমন ও সেটা কিভাবে শনাক্ত করা যাবে সেই বিষয়ে একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন।
ব্যারি বারিশ একই ইনস্টিটিউটের পার্টিকেল পদার্থবিজ্ঞানী। এখন সেখানকার এমিরেটাস অধ্যাপক তিনি। ১৯৯৪ সালে লেজারইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েব অভজারভেটরি বা লাইগোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। তবে সেসময় ঝুঁকির কারণে তার পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে নতুন করে গবেষণা শুরু করেন তিনি এবং তিন বছর পরে প্রথম পরিমাণ ঘোষণা করতে সক্ষম হন।
লাইগো নিয়ে তার সঙ্গে কাজ করেছেন স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী রোনাল্ড ড্রেভার। তবে এই তরঙ্গ আবিষ্কারের ১৮ মাস পূর্বেই মারা যান তিনি। মৃত্যুর পর নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই।
২০১৬ সালেই তাদের আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে সারাবিশ্বে সাড়া ফেলে দেন বিজ্ঞানীরা। ২৫ ব্ছর ধরে গবেষণার ফল বেরিয়ে আসে। সূর্যের থেকে প্রায় ৩৫ গুণ ভারী দুটি কৃষ্ণ গহ্বরের সংঘর্ষ থেকে উৎপন্ন এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ (গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ) শনাক্ত করা হয়েছে। পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ওই দুটি ব্ল্যাক হোল একে অন্যের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে একসঙ্গে মিশে যায়।
পদার্থের টপোলজিক্যাল দশার গবেষণার জন্য তিন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডেভিড জে ফাউলেস, এফ ডানকেন হোলডেইন ও জে মাইকেল হসট্রলিজ গতবছর পদার্থে নোবেল পেয়েছিলেন।
বুধবার রসায়ন, শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। আর সাহিত্য পুরস্কার কবে ঘোষণা করা হবে, সে তারিখ পরে জানানো হবে বলে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ০৩, ২০১৭)