নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : পেশাদার শিশু অপহরণ ও পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের সক্রিয় সদস্য ও ‘মুল হোতা’ সাহাবুদ্দিন সাহেদকে (৪২) আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)-১১।

 বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

এর আগে বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সাহেদকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট ও একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

 সাহেদ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রামনগর এলাকার মৃত ছাবেদ আলীর ছেলে।

র‌্যাব জানায়, আটককৃত আসামী সাহাবুদ্দিনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে সে পেশাদার শিশু অপহরণ ও পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্রের সক্রিয় সদস্য। সে পেশায় ছিল ট্রাক ও টেম্পুর চালক। ১৯৯৯ সালে সে বন্দর থানা এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে চার মাস জেল খাটে। পরে ২০০৬ সালে নিজের নাম পরিবর্তন করে সেলিম ছদ্মনামে পাসপোর্ট করে সৌদি আরব চলে যায়। মাত্র ২৭ দিন পর দেশে ফেরত এসে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন মেট্রো সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি নেয়। সেখানেও ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট আত্মসাৎ করে অন্যত্র বিক্রি করার অপরাধে ফতুল্লা থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে সে পালিয়ে চাঁদপুরে তার আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরে তার আত্মীয়ের শ্যালিকার সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে ২০০৭ সালে পালিয়ে বিয়ে করে। পরবর্তীতে ঢাকায় ট্যাক্সি চালানোর পাশাপাশি সে শিশু অপহরণ ও পাচারকারী চক্রের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে।

সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যান্য সদস্য জাকির, টিটু, জেসমিন, বানেছা, বেলু ও আসলাম গংদের পারস্পারিক যোগসাজসে ঢাকার সদরঘাট, কমলাপুর, যাত্রাবাড়ি, নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা থেকে শিশু অপহরণ করত সাহেদ। যার মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুকে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে সে স্বীকার করেছে।

আটকের সময় জব্দকৃত তার পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সে সাহেদ ছদ্মনামে পাসপোর্ট করে অক্টোবর ২০১৪ সাল হতে জানুয়ারি ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৫ মাসে ৬ বার ওমানে যাতায়াত করেছে। কোনবারই সে এক মাসের বেশি সময় ওমানে অবস্থান করেনি।

এ সময় টাকার বিনিময়ে লাকী, আশা ও শিলা নামের ৩ নারীকে সে ওমানে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও বিদেশ নেওয়ার নামে অনেকের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে সে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। এ সকল কারণে এলাকায় সে প্রতারক সাহাবুদ্দিন নামে পরিচিত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায় জাকির, টিটু, বানেছা ও জেসমিনসহ এই অপহরণকারী চক্রের কাছ থেকে দুই ধাপে সে মোট ৫ টি শিশু ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে গুলিস্তান থেকে গ্রহণ করে দুইজন নারীর কাছে পৌঁছে দেয়। এই মামলায় ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত টিটু, জেসমিন ও বানেছার স্বীকারোক্তিতেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই কাজের জন্য সাহাবুদ্দিন ২ লক্ষ টাকা পায় বলে জানায় সে।

আটককৃত আসামী সাহাবুদ্দিন সাহেদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় অস্ত্র ও ডাকাতি এবং ফতুল্লা থানায় ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে বলে সে জানায়। ইতিপূর্বে সে বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে বলেও স্বীকার করেছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ০৫, ২০১৭)