রোহিঙ্গা সংকট
বাংলাদেশকে অবস্থান ব্যাখ্যা ভারতের
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : দিল্লি সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভারতে তার কাউন্টারপার্ট এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিশদ আলোচনা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।
এছাড়া ভারতের রাজধানীতে আজ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সাথেও আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন শহীদুল হক। সেই বৈঠকেও চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে দুজনের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৫শে আগস্ট থেকে যখন বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামা শুরু হয়, তারপর দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক হলো।
বাংলাদেশ আগাগোড়াই চাইছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টায় ভারত আরও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করুক, কিন্তু ভারতের নিজস্ব নানা বাধ্যবাধকতার কারণে সে কাজটা মোটেও সহজ হচ্ছে না।
এদিনের বৈঠকের শেষে কোনও পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ না-করলেও বিবিসি জানতে পারছে, বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল প্রধানত দুটো - প্রথমত, এ মাসের শেষদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফর, আর দ্বিতীয়টি অবশ্যই রোহিঙ্গা সংকট।
বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট কনসাল্টেটিভ কমিশনের চতুর্থ বৈঠকে যোগ দিতে সুষমা স্বরাজের এ মাসের ২৩ তারিখ নাগাদ ঢাকায় যাওয়ার কথা আছে। সেই সফরের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক বা জমি তৈরি করতে দুই সচিব নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরেছেন।
তবে অবশ্যই বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ ছিল রোহিঙ্গা সংকট। মাস দেড়েক আগে যখন এই সংকট নতুন করে শুরু হয়, তার প্রথম পর্যায়ে কিন্তু ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশকে বেশ হতাশ করেছিল।
বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেহেতু মিয়ানমারে সফরে গিয়ে আং সান সু চি-র সঙ্গে দেখা করার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনও কথাই বলেননি, সেটাকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে এক রকম শীতলতাই তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু এদিন দুই পররাষ্ট্র সচিবের মুখোমুখি বৈঠকে সেই অনাস্থা বা ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ বরাবরই বলে এসেছে রোহিঙ্গা সংকটে তারা ভারতের কাছ থেকে আরও সদর্থক ভূমিকা আশা করে এবং মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ভারত যেন এই সংকট নিরসনের চেষ্টা করে।
সে ব্যাপারে আজকের বৈঠকে কোনও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মিললেও ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা এ ব্যাপারে মূলত তিনটি বিষয় বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরেছেন।
এক- মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়েই ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী - দুজনের সঙ্গেই তাদের সম্পর্ক খুব ভাল। ফলে এক দেশের পক্ষ নিয়ে অন্য দেশের প্রতি ভারত কিছুতেই আক্রমণাত্মক হতে পারবে না।
তা সত্ত্বেও ভারত কিন্তু চুপচাপ বসে নেই, নেপথ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে ঠিকই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন - রাখাইন প্রদেশে সব ধরনের হিংসা বন্ধ করাটা যে মিয়ানমারের স্বার্থেই প্রয়োজন সেটাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে।
দুই- এই সংকটের 'মানবিক দিক'টা অ্যাড্রেস করতে ভারত তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার অংশ হিসেবেই শুরু হয়েছে 'অপারেশন ইনসানিয়ত' - যাতে দিনকয়েক আগে প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ নিয়ে চট্টগ্রামে উড়ে গিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর স্পেশাল এয়ারক্র্যাফট।
এরপর সমুদ্রপথেও পাঠানো হয়েছে হাজার টনেরও বেশি রসদপত্র - সেই ত্রাণবাহী জাহাজও বাংলাদেশে পৌঁছতে চলেছে।
তৃতীয়ত- ভারত বাংলাদেশকে এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে যে শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে ভারত একা কিছুই করতে পারবে না - কারণ এর জন্য চাই আন্তর্জাতিক স্তরে একটা সম্মিলিত কূটনৈতিক প্রয়াস।
এই কারণেই বাংলাদেশকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে যারা রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারকে জোরালো সমর্থন জানাচ্ছে - সেই চীন বা রাশিয়ার সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলতে, যাতে তারাও মিয়ানমারের ওপর তাদের প্রভাবটাকে কাজে লাগাতে পারে।
ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারতের ভূমিকা আপাতত এই ত্রাণ পাঠানো আর 'পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা'র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় এমনটাও বলছেন যে তাদের বিশ্বাস বাংলাদেশ ঠিকই বুঝবে যে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের চেষ্টায় ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ যেটা করা সম্ভব ঠিক সেটাই করা হচ্ছে - এই মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বোধহয় ভারত করতে পারবে না।
ছবি ও প্রতিবেদন : বিবিসি বাংলার সৌজন্যে
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ০৫, ২০১৭)