আসছে লাগাতার অবরোধ
তারেক সালমান, দিরিপোর্ট২৪ : নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আগামী সপ্তাহে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ১৮ দলীয় জোটের একাধিক শীর্ষ নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের ওইসব নেতারা জানান, ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনের পর ৯ নভেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অথবা গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। এছাড়া টানা পাঁচ দিনের হরতাল কর্মসূচিও আসতে পারে।
জোটের শরীক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রধান শফিউল আলম প্রধান দিরিপোর্ট২৪কে বলেন, অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে আমাদের আগেই আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ২৭, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর এবং চলতি সপ্তাহের ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালন করে। এ সময় সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ২০ জনের প্রাণহানি হয়।
সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী এই আন্দোলনে পরাজিত হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে জোটের। তাই নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে হরতাল ছাড়াও সড়কপথ, রেলপথ ও জলপথ অবরোধের মাধ্যমে সারাদেশকে অচল করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জোট নেতারা।
সূত্রটি জানায়, ইতোমধ্যে বিরোধীদলীয় জোট এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো তীব্র আন্দোলনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন হলে তা প্রতিহত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে তারা। তবে আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দল ও জোটের সিনিয়র নেতারা সঙ্কট সমাধানে সংলাপের প্রতি সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিরোধী দলের নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসন করতে। একইসঙ্গে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে। আর সেজন্যই তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাচ্ছে। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া না দিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠনে আগ্রহী। ফলে বিরোধীদলীয় জোটের সামনে আন্দোলনকে তীব্র করা ছাড়া বিকল্প নেই।
সূত্রটি জানায়, সরকার নির্দলীয় সরকারের নির্বাচন দিলে বিরোধীদলীয় জোট আন্দোলন বন্ধ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও মঙ্গলবার রাতে ঢাকা সফররত মার্কিন কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবটের সঙ্গে বৈঠককালে জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া পেলে বিএনপি সংলাপের জন্য প্রস্তুত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, আমরা আন্দোলনের পথে যেতে চাই না। আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে চাই। এজন্য বিরোধী দল সংসদে নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে প্রস্তাব পেশ করেছে এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ২৯ অক্টোবরের পর যেকোনো স্থানে আলোচনায় বসতে রাজি। এখন সরকারকেই আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারপক্ষ এখনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে সংলাপের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, শিগগির সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না হলে বিরোধীদলীয় জোটের সামনে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, নির্বাচনকালী নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠান না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতাসীন দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাইলে সারাদেশে গঠিত কেন্দ্রভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবে।
জোট নেতা লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই জনগণের ন্যায্য দাবি নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা আদায় করতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই সামনে হরতালের চেয়ে কঠিন কর্মসূচি আমরা নেব। জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। আগামী সপ্তাহেই এসব কর্মসূচি আসবে।
(দিরিপোর্ট২৪/টিএস/এসবি/নভেম্বর ০৭, ২০১৩)