ফোনের লক খুলবে হৃদপিণ্ডের সাহায্যে
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : স্মার্টফোনের নিরাপত্তায় আমাদের মোবাইল ফোনে পাসওয়ার্ড দিয়ে অথবা প্যাটার্ন লক ব্যবহার করি। আবার অনেক ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক পাসওয়ার্ড পদ্ধতি হিসেবে আঙুলের ছাপ, চোখের মণি বা মুখচ্ছবির শনাক্তকারী প্রযুক্তিও ব্যবহার করি। এবার সেগুলো হতে যাচ্ছে অতীত!
নতুন পদ্ধতিতে এবার আসছে হৃদপিণ্ড শনাক্তকারী প্রযুক্তি। কারণ, স্মার্টফোনের নিরাপত্তায় বিজ্ঞানীরা এবার উদ্ভাবন করল ‘হার্ট স্ক্যানার’। অর্থাৎ অদূর ভবিষ্যতে হৃদপিণ্ড শনাক্তকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্টফোন লক, আন-লক করা যাবে।
হার্টের মাধ্যমে ইউজার চেনার এ প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করার কৃতিত্ব নিউ ইয়র্কের বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের। তাঁরা জানিয়েছেন, কম্পিউটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের কাজেও প্রয়োগ করা হবে এই পদ্ধতি।
জানা গেছে, এই পদ্ধতিতে হার্ট পরিমাপ করতে নিম্ন স্তরের ডপলার রাডার ব্যবহার করা হবে এবং সবসময় হার্টকে অবিরত পর্যবেক্ষণ করতে থাকবে যাতে আপনি ছাড়া অন্য কেউ আপনার কম্পিউটার ব্যবহার করতে না পারে।
বর্তমানে যেসব বায়োমেট্রিক সিস্টেম রয়েছে, যেমন রেটিনাল স্ক্যান বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট, সেগুলোর তুলনায় এ প্রযুক্তিটি অনেক বেশি নিরাপদ এবং আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন, এমনটাই বলা হচ্ছে। কারণ কী? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,
প্রথমত, এটি হচ্ছে প্যাসিভ, নন-কনক্ট্যাক্ট ডিভাইস। ফলে ইউজার যখন লগ-ইন করবে, তখন বার বার নিজের পরিচয় শনাক্তকরণের ভোগান্তি সহ্য করতে হবে না।
দ্বিতীয়ত, এটির মাধ্যমে ইউজারকে ক্রমাগত নিরীক্ষণ করা সম্ভব হবে। তার মানে, কম্পিউটার আপনি ব্যতীত অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। তাই ইউজার যখন কম্পিউটার থেকে দূরে রয়েছে তখন লগ-অফ করার দুশ্চিন্তা থাকবে না।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই সিস্টেম প্রথমবার হার্টকে স্ক্যান করতে সময় নেবে ৮ সেকেন্ড এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে মুহূর্তেই এটি ইউজারকে শণাক্ত করতে পারবে। এই প্রযুক্তিটি হার্টের আকৃতি ও হৃদস্পন্দনের ধরণ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করে রাখবে।
বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং নিরাপত্তা প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান গবেষক ড. ওয়েনইয়াও জু বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেক কম্পিউটারের জন্য এটি ব্যবহার করতে চাই। কারণ প্রত্যেকেরই গোপনীয়তা প্রয়োজন। বারবার পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ-ইন এবং লগ-আউট করাটা খুবই বিরক্তিকর।’’
হৃদয়-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক সিস্টেম প্রায় এক দশক ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, তবে তা ইলেক্ট্রোড পরিমাপের জন্য ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম সংকেতের কাজে। এবার প্রথমবারের মত বিজ্ঞানীরা হার্টের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করেছেন পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ পদ্ধতিটির সিগন্যাল ওয়াই-ফাইয়ের চেয়েও কম শক্তির, তাই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। এর সিগন্যাল মাত্র ৫ মিলিওয়াটের, যা আমাদের স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের এক শতাংশেরও কম।
ড. ওয়েনইয়াও জু বলেন, হার্ট স্ক্যানার সিস্টেমটি দ্রুত ডেভেলপ করবেন তাঁরা এবং কম্পিউটার ডিভাইস বা গ্যাজেটের এক কোণে প্রতিস্থাপন করা হবে। অন্যদিকে, বিমানবন্দরে পরিচয় সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ডিভাইস ৩০ মিটার দূর থেকে একজন ব্যক্তিকে নিরীক্ষণ করতে পারবে।
খবর- এবেলা
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/অক্টোবর ০৭, ২০১৭)