বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণ ও পরে মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে নির্যাতনের ঘটনায় সদর থানায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে পুলিশ। এতে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক তুফান সরকারসহ ১৩ জনের নাম রয়েছে।

মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় জেলার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তুফান সরকারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ধর্ষণ ও মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ১৩ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে তারা হচ্ছেন-বহিষ্কৃত শহর শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি রুমি খাতুন, শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু, তুফান বাহিনীর সদস্য আতিক, মুন্না, আলী আজম দিপু, রূপম, শিমুল, জিতু, নরসুন্দর জীবন রবিদাস ও কাজের মেয়ে আঞ্জুয়ারা।

এদের মধ্যে শিমুল পলাতক রয়েছেন। বাকি সব আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নরসুন্দর জীবন ও তুফানের শ্বশুর রুনু ও আঞ্জুয়ারা এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। তদন্তে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে তুফান সরকার বগুড়া কারাগারে মাদকসেবন করায় তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের হাইসিকিউরিটি সেলে পাঠানো হয়েছে। তার শ্বশুর জামিলুর রহমান একটি মামলায় জামিন পেলেও অপরটিতে জামিন পাননি।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধান আসামি তুফানের সহযোগী আতিক ও দিপু এবং নরসুন্দর জীবন আদালতে মা ও মেয়েকে ন্যাড়া এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা তুফান, আশা, রুমকি ও রুমি বেগমসহ অন্যদের কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়েও স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেননি। ভিকটিম ছাত্রীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীকে নাবালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্রে মোট ১৬ জন সাক্ষী রাখা হয়েছে। আলামত হিসেবে তুফানের প্রাইভেট কার, দুটি ক্ষুর, দুটি কাঁচি, ভিকটিমদের স্বাক্ষর নেওয়া কাউন্সিলর রুমকির পৌরসভার প্যাডের পাতা, নির্যাতনের এসএস পাইপ, মা ও মেয়ের কেটে ফেলা চুল জব্দ করেছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুটি মামলায় তুফান সরকারসহ ১৩ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যাদের সবার বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। পলাতক আসামি শিমুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, এসএসসি পাস এক ছাত্রীকে বগুড়া সরকারি আযিযুল হক কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার কথা বলে গত ১৭ জুলাই তাকে কৌশলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ‘ধর্ষণ করেন’ তুফান সরকার। ঘটনা জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী আশা স্বামীকে দায়ী না করে ঘটনার জন্য ভিকটিমকেই দায়ী করেন। এরপর আশা তার বোন কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির মাধ্যমে ২৮ জুলাই ভিকটিম ও তার মাকে কাউন্সিলরের বাসায় ডেকে নেন। সেখানে তাদের মারধরের পর মাথার চুল ন্যাড়া করে দেন। তারা যাতে আদালতের আশ্রয় নিতে না পারেন সে জন্য তাদের কাছ থেকে পৌরসভার প্যাডে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। প্রতিবেশীর সহায়তায় মা-মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ঘটনা প্রকাশ পায়। পুলিশ ঘটনার রাতেই তুফানসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে।

২৯ জুলাই তুফানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা। বর্তমানে নির্যাতিত মা-মেয়ে আদালতের নির্দেশে রাজশাহীর সেফহোম এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছেন।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ১০, ২০১৭)