৪২ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড জনশক্তি রফতানির হাতছানি
কাওসার আজম : জনশক্তি রফতানির ইতিহাসে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে। ওই দুই বছর রেকর্ড সংখ্যক ১৭ লাখের বেশি কর্মী রফতানি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬০৯ জন এবং ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন শ্রমিকের বিদেশে কর্মসংস্থান হয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।
গতবছর ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন কর্মী রফতানি করে এ রেকর্ডের কাছাকাছি গিয়েও তা পূরণ সম্ভব হয়নি। তবে, চলতি (২০১৭) বছর ২০০৭ ও ২০০৮ সালের জনশক্তি রফতানির রেকর্ড ভাঙ্গতে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রফতানি হয়েছে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৬১ জন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন ২০১৭ তথা চলতি বছরে ১০ লাখ কর্মী রফতানি হবে বিদেশে। এটি হলে জনশক্তি রফতানির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে।
১৯৭৬ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। প্রথম দিকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার তথা শুধু মধ্যপ্রাচ্যতেই সীমাবদ্ধ ছিল শ্রমিক রফতানি।এরপর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। তবে জনশক্তি রফতানির ৪২ তম বছর তথা ২০১৭ সালে এসেও জনশক্তি রফতানির শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্য।
চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৬১ জন বিদেশে গেছে। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই গেছে ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৯৭ জন। এরপর যথাক্রমে কুয়েত ৩৭,৮৬১ জন, কাতার ৬৪,৩৯৬ জন, ওমান ৬৬,৭৩ জন, মালয়েশিয়া ৪৯,৩০৭ জন, সিঙ্গাপুর ৩০,৯৩৬ জন, জর্ডান ১৫,৯৬৪ জন, বাহরাইন ১৭,৭৪৭ জন উল্লেখযোগ্য।
২০১৫ সালের ১৪ জুলাই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। সানোয়ারা গ্রুপের স্বত্তাধিকারী ও চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং বন্ধ থাকা বড় শ্রমবাজারগুলো উন্মুক্তের উদ্যোগ নেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে রেকর্ড সংখ্যক জনশক্তি রফতানির পর পর ২০০৯ সাল থেকে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া, কুয়েত এবং ২০১৩ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রফতানি বন্ধ করে দেয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের তৎপরতার মাধ্যমে সৌদি আরব, কুয়েত ও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়। এ দেশ দুটিতে বিপুল সংখ্যক কর্মী রফতানি হচ্ছে। এছাড়া ওমান, কাতার, জর্ডান ও বাহরাইনেও কর্মী রফতানি বেড়েছে। তবে এখনো বড় পরিসরে কর্মী রফতানি বন্ধ রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর যুদ্ধ বিধ্বস্থ ইরাকেও কর্মী যাচ্ছে। তবে অন্য যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংস্থান মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশ সফর শুরু করেন নুরুল ইসলাম বিএসসিসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তিনি একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, শুধু মধ্যপ্রচ্য, মালয়েশিয়া বা আগে থেকে যেসব দেশে শ্রমিক যাচ্ছে সেসব দেশ নয়, নতুন নতুন দেশে বাংলাদেশ থেকে কিভাবে কর্মী পাঠানো যায় সেই উদ্যোগ নিয়েছে তার মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশ বিশেষ করে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়ার মতো উন্নত দেশে কর্মী প্রেরণের উদ্যোগ অনেকটাই এগিয়েছে বলে জানা গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বন্ধ থাকা অন্য শ্রমবাজারগুলো উন্মুক্ত করা সম্ভব হলে এবং টার্গেটকৃত কয়েকটি উন্নত দেশে কর্মী রফতানির দ্বার উন্মোচিত হলে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হবে বলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেডটি/অক্টোবর ১২, ২০১৭)