দেশে ফিরলেন খালেদা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : লন্ডনে চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে তিন মাস তিন দিন পর দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টায় তিনি তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে বাইরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে বিমানবন্দর সড়কে দেখা দেয় যানজট।
খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে নামার পর গাড়িতে করে সরাসরি গুলশানে তার বাড়ির পথে রওনা হন। তার সঙ্গে ছিলেন তার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার।
তিনি উড়োজাহাজ থেকে নামার পর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ তাকে শুভেচ্ছা জানান তার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভিআইপি লাউঞ্জে পুলিশ জ্যেষ্ঠ অন্য নেতাদের ঢুকতে না দেওয়ায় তারা বিমানবন্দর মসজিদের কাছে সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গাড়িতে থাকা খালেদাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিমানবন্দর থেকে বনানী কাকলী পর্যন্ত সড়কে দুই পাশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে দলীয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এইসব স্থানে রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালের সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন, সিলেটের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম তাদের সমর্থকদের নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়ান। তাদের হাতের ব্যানারে খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ অভিহিত করা হয়।
এদিকে খালেদা জিয়ার ফেরাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছিল পুলিশ। বিমান বন্দরের ভেতরে আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য ছিল, বাইরেও মোতায়েন ছিল পুলিশ সদস্য। বিমানবন্দরে সামনে দুটি জলকামান, প্রিজন ভ্যানও ছিল।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময়ে দেশে ফিরলেন যখন তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
বাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় গত ৯ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন বেগম। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঢাকায় দুটি আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মানহানির মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নবী এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আক্তারুজ্জামান এ দুটি পরোয়ানা জারি করেন।
বিএনপি মনে করে, রাজনৈতিক কারণেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া দেশে আসবেন। উনার কিছুই হবে না। তাঁকে গ্রেপ্তার করে সরকার এই ভুল করবে না। আমরা মনে করি রাজনৈতিক প্রভাবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে।’
অপরদিকে একইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। গ্রেফতারি পরোয়ানাটা আমাদের কাছে এসে যখন পৌঁছে যাবে, তখন আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
আর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক বলেছেন, ‘পুলিশের কাছে, থানায় এখনো আমরা গ্রেফতারি পরোয়ানা পাইনি। আদালতে হয়তো ফাইল ইস্যু হয়েছে। এইগুলো কোর্টের মাধ্যমে থানায় আসতে হবে। গ্রেফতারি পরোয়ানা আসার সাথে সাথেই যে একজনকে গ্রেফতারি করতে হবে সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কাজেই অত্যন্ত দায়িত্বশীল। আমরা কখনোই পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেফতারি করে কোর্টে নিয়ে যাব, আমি মনে করি এটার প্রয়োজন হবে না।’
গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন। তার বড় ছেলে ও দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ১৮, ২০১৭)