রোহিঙ্গা উচ্ছেদের মিশন প্রায় শেষ
সিরাজুল ইসলাম, তেহরান থেকে : সত্যিই জটিল হয়ে গেছে রোহিঙ্গা সমস্যা। ফলে সমাধান যে সহজে আসবে না -তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পরিস্থিতি যা, তাতে মোটামুটি একথা বলা যায় যে, মিয়ানমারের আরাকান বা রাখাইন রাজ্য থেকে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান এখন বাংলাদেশের কাঁধের ওপর। যদি আমরা মানবতার কথা বলি, আর্ত-মানবতার পাশে দাঁড়াতে চাই তাহলে সুদীর্ঘকাল ধরে তাদের এই ভার আমাদেরকে বহন করতে হবে। আমরা চাইলেই এ ভার হতে মুক্তি পাব না।
রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমার সরকার আদৌ ফেরত নেবে বলে মনে হয় না। পরিস্থিতি যা তাতে বলা যাচ্ছে, দুর্যোগ-দুর্ভোগে নিপতিত এই জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশকে তাদের পাশেই থাকতে হবে; কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখনো‘মানুষ’আছে। ফলে তারা নিজেরাই সে দায়িত্ব কাঁধে নেবে; ঠেকানো যাবে না। সর্বোপরি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান- মুসলিম জাতিসত্ত্বার প্রতি বাংলাদেশের মুসলমানদের আলাদা একটা টান আছে; রোহিঙ্গাদের বেলায়ও সেটা থাকবে।
কোনো সন্দেহ নেই- রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ সরকার বড় রকমের বিপদে পড়েছে। একদিকে আশ্রয় না দিলে আন্তর্জাতিক চাপে পড়বে; অন্যদিকে মানবতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া মানে আরাকান রাজ্য খালি হতে সহায়তা করা (মিয়ানমারের সরকার ও সেনারা সেটাই চায়) আবার আশ্রয় না দিলে লাখ লাখ মানুষকে হত্যার মুখে ঠেলে দেয়া হয়। কোনদিকে যাবে সরকার? বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী ভারত এ ইস্যুতে বৈরি, সেকথাও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে সরকারকে। শুধু ভারত কেন, চীনও একই কাতারে। অথচ চীন ও ভারত- দু দেশই বাংলাদেশ সরকারের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি এখন‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’অবস্থায় পৌঁছেছে।
যেকোনো সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে- সংলাপ বা আলোচনা। কিন্তু রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আর সেখানে নেই, সংলাপ করে সমাধান মিলবে বলে মনে হয় না। রোহিঙ্গারা এতটাই অসহায় যে, তারা এখন কোনো পক্ষ না; তারা আলোচনায় অংশ নিতেও পারবে না। বাংলাদেশ সমাধান করবে কিন্তু ভারত কার্যত বিগড়ে রয়েছে। চীনও সেই পথে। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে হঠাৎ মুক্তির কোনো পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না। কখনো-কোনোদিন যদি কতকগুলো‘বিশ্বশক্তি’সদয় হয় তবেই রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে মুক্তি আসবে। আর মুক্তি আসতে পারে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি এবং তার দেশের সামরিক জান্তারা যদি‘মানুষের কাতারে’আসেন তাহলে; অন্যথায় নয়। কিন্তু কথিত সেইসব বিশ্বশক্তির ভেতরে ঐক্য হবে না, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানও আসবে না। মিয়ানমারের নেত্রী ও জান্তাদের নিয়েও আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম। বরং আমরা দেখছি- এত রক্তপাত, এত জীবনহানি; হাজারো মা-বোনের ইজ্জত যাচ্ছে তবুও বিশ্বের বহু শক্তি, বহু দেশ সেই মিয়ানমার সরকারকেই রাজি-খুশি করার কাজে ব্যস্ত। শুধুমাত্র কিছু স্বার্থের জন্য বিশ্বশক্তিগুলো আজ এই নির্লজ্জ ভূমিকায় লিপ্ত আর‘মজা লুটছে’মিয়ানমারের উগ্রবাদী সরকার ও সেনাবাহিনী। বিশ্বের বহু বড় বড় শক্তির কাছে এই‘দস্যু সরকার’তাদের নিজেদের কদর দেখে নিজেরাই হয়ত অবাক হচ্ছে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা এখন আর মিয়ানমারের নিজস্ব সমস্যা নেই, এটা এখন আর মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় কোনো সমস্যাও নয়। এটা এখন অবশ্যই আন্তর্জাতিক সংকট; অনেক বড় সংকট। এ সমস্যার সমাধানে বিশ্বের অনেক বড় শক্তি আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইউরোপ আর আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের একমত হওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। আগেই বলেছি, সেই একমত হওয়াটা খুব সহজ বিষয় নয়। আমেরিকার হিসাব একরকম, ইউরোপের হিসাব আরেকরকম তবে তা আমরিকার স্বার্থের অনুকূল। রাশিয়ার হিসাব একরকম; চীনের হিসাব আরেকরকম। ভারতেরও রয়েছে নিজস্ব আলাদা কিছু হিসাব নিকাশ। বিশ্বের ক্ষুদ্র অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের রয়েছে বিশেষ স্বার্থ ও লক্ষ্য। ফলে তাদেরও হিসাব আলাদা। সবাই থামলেও ইসরাইল থামবে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মোড়লদের মধ্যে ঐক্যের সম্ভাবনা একদমই কম। ফলে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনেই বলতে হচ্ছে- বহুদিন, বহুযুগ ধরে‘পোড়াকপালি’থাকবে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। আপাতত আশার আলো নেই; খুব তিক্ত হলেও এ কথা সত্য। মুসলিম দেশগুলো বড়জোর রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ত্রাণ দিতে পারবে, সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে বাংলাদেশের ওপর চাপ কিছুটা কমাতে পারবে; অন্য কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। সেখানেও নানারকম হিসাব নিকাশ রয়েছে। নিজেদের মধ্যে মতভেদ অনেক। কোনো কোনো দেশের আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেও‘কিছু মুসলিম মোড়লের জন্য’সেই আন্তরিকতা আলোর মুখ দেখবে বলে জোর সন্দেহ আছে। ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে কিছু একটা হয়ত করা সম্ভব হতো কিন্তু সেই ঐক্য নেই, কিছু একটা করাও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
বর্তমান বিশ্বটাকে বলা হয়‘গ্লোবাল ভিলেজ’বা‘বিশ্বগ্রাম’। যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন এবং এর বিপুল ব্যবহারের কারণে পৃথিবীর কোনো প্রান্তের খবরই এখন আর কারো অজানা থাকছে না। শুধু অজানা থেকে গেছে মিয়নামারের কার্যত নেত্রী, স্টেট কাউন্সিলর এবং‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার’পাওয়া অং সান সুচির কাছে। তিনি বার বার বার বলেই চলেছেন- রাখাইনে কিছু হয় নি। কোনো হত্যাকাণ্ড হয় নি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয় নি, কোনো নারী তার সম্ভ্রম হারান নি, কোনো শিশুকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নি, কাউকে উচ্ছেদ করা হয় নি। যা কিছু প্রচার করা হচ্ছে তা সবই মিথ্যা খবর। তার বক্তব্য অনুযায়ী- রাখাইনে শান্তির নহর বয়ে যাচ্ছে। সেই নহর শুধু তিনি দেখতে পাচ্ছেন, আর কেউ নয়। কিন্তু আসলে কী তাই? যদি শান্তির নহর বয়ে গিয়ে থাকে তাহলে ওরা আসছে কেন? কেন আসছে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে, জলে ভিজে, দিন-রাত পাহাড়ি দুর্গম পথ ডিঙিয়ে? কেন আসছে সাগর পাড়ি দেয়ার ঝুঁকি নিয়ে? কেন আসছে বহুকালের পৈত্রিক ভিটেমাটি ফেলে? কেন তারা আসছে নিজের জায়গা-জমি ছেড়ে পরের দেশে? কী সুখের আশায় আসছে বাংলাদেশের পাহাড়ের ঢালে বানানো বস্তির বাসিন্দা হতে? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারবেন সুচি? যদি না পারেন তাহলে কেন পাগলের মতো প্রলাপ বকছেন? আপনি কী অন্ধ হয়ে গেছেন? আপনি না শান্তিতে নোবেল বিজয়ী! শান্তির প্রতি আপনার এই কী বিচার? আপনার অনেকগুলো পদক ও সম্মাননা কেড়ে নেয়া হয়েছে তা কী আপনি জানেন? নাকি স্টেট কাউন্সিলরের পদটা ধরে রাখার জন্য সেই খবর রাখারও প্রয়োজন বোধ করেন না? আপনি কী জানেন সুচি- যদি আপনি একটু সদয় হন তাহলে সব বিশ্বশক্তির বিরোধিতা সত্ত্বেও লাখো বনিআদমের জীবন বেঁচে যায়! লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবনে বাঁচে! আপনার একটু শুভবুদ্ধি কত মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বয়ে আনতে পারে তা কী আপনি একটু ভেবে দেখবেন? আপনি মিয়ানমারের নেত্রী, আপনার সেনাপ্রধান আপনার কথা শুনবে না- তা কী হয়! আপনি তো এত যুগ ধরে সংগ্রাম করেছেন, সেই সংগ্রামের কারণে আপনি নোবেল পুরস্কারের মতো বড় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এখন যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে নিজের দেশের শান্তি বজায় রাখতে না পারেন, আপনার দেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা না দিতে পারেন, তাদের জীবনে যদি শান্তি না থাকে তাহলে আপনার এই নোবেল পুরস্কারের কী মূল্য থাকে? এসব কথা কী আপনার কাছে পৌঁছাবে সুচি? কখনো কী আপনার হৃদয়মন্দিরে ভাসবে এসব চিন্তা? যদি না পৌঁছায়, যদি না ভাসে তাহলে জেনে রাখুন- রোহিঙ্গারা এই বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ ঠিকই খুঁজে নেবে। আজ হোক কাল হোক তারা মুক্তির পথ বের করবেই। সে পথ হবে স্বাধীনতার পথ। লড়াইটা হয়ত অনেক বেশি ব্যয়বহুল হবে কিন্তু সে ব্যয় তারা করতে শিখে গেছে। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা তো কম জীবন দেয় নি। অতীত আর ভবিষ্যতের মৃত্যু-খরচের হিসাব মিলিয়েই একদিন তারা নেমে যেতে পারে স্বাধীনতার পথে; লড়াইয়ের পথে। যদি এমনটি হয় তখন তাদের রুখে দেয়া কঠিন হবে। কারণ যে জাতি জীবন দিতে শিখেছে তাকে আটকে রাখা যায় না। যার কাছে বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়ার মাঝে আলাদা সীমারেখা নেই তাকে যুদ্ধের ময়দানে পরাজিত করা কঠিন। সেই কঠিন পথ একদিন বেছে নিতে পারে রোহিঙ্গারা। হয়ত তারা একদিন বুঝে যাবে- লড়াইয়ের পথ ধরেই আসবে স্বাধীনতা; স্বাধীনতার পথ ধরে তারা গেয়ে যাবে জীবনের জয়গান। স্বাধীনতার নিশান ওড়ানোর কাজটি কোথা থেকে কে করবে তা হয়ত আজ অজানা কিন্তু কোনো এক শুভক্ষণে জেগে উঠবে না সেই বীর পুরুষ-কে জানে! হয়ত বাংলার পাহাড়ের ঢালে বাঁশের চটিতে বানানো কোনো এক বস্তি হয়ে যাবে আরাকানের স্বাধীনতা ঘোষণার দুর্ভেদ্য দূর্গ! কিংবা পৃথিবীর অন্য কোনো এক ভূখণ্ড! সেদিন হয়ত রোহিঙ্গাদের নামের পাশে আর থাকবে না-‘বিশ্বের রাষ্ট্রহীন সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী’। সেদিনের জন্যও প্রস্তুত হোন সুচি।
উইকপিডিয়ার তথ্য মতে-মিয়ানমারে মোট ১৩৫টি নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। সবাই দেশটির নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় শুধু রোহিঙ্গারা ছাড়া। মিয়নামারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য ২১ লাখ মতো। কিন্তু মিয়ানমারের সেনা এবং উগ্র মগ ও বৌদ্ধ দস্যুদের হামলায় এ পর্যন্ত দেশ ছেড়েছে ১৬ লাখের বেশি। এর মধ্যে কয়েক দফায় বাংলাদেশে ঠাঁই নিয়েছে নয় লাখের মতো। সৌদি আরবে আছে চার লাখ, পাকিস্তানে আছে দুই লাখ, থাইল্যান্ডে এক লাখ, মালয়েশিয়ায় ৪০ হাজার ৭০০, ভারতে ৪০ হাজার, আমেরিকায় ১২ হাজারের কিছু বেশি, ইন্দোনেশিয়ায় ১১ হাজার ৯৪১ এবং নেপালে ২০০। আল-জাজিরা বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান।
এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা উচ্ছেদের মিশন প্রায় শেষ পথে। রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গা মুক্ত হতে চলেছে। অথচ বিশ্বের সব শক্তি এখনো বিবৃতি আর নিন্দা জানানোর মধ্যে আছে। আমেরিকার মতো বড় শক্তি এখনো সতর্ক করেই যাচ্ছে; কাজের কাজ কিছু করছে না। যখন মিয়ানমারের সেনারা ও উগ্র বৌদ্ধরা অসহায় একটা জনগোষ্ঠীকে মেরে সাফ করে ফেলছে তখন এসব বিবৃতি, নিন্দা, সমালোচনা, হুমকি-ধমকির কী মূল্য আছে? মিয়ানমারের সেনারা নিশ্চিত হয়ে গেছে- ইসরাইল যখন তাদের পাশে আছে তখন গোটা পশ্চিমা বিশ্ব তাদের পাশে থাকবে অন্তত যুদ্ধ করতে আসবে না। তারা আরো নিশ্চিত হয়েছে যে, চীনের মতো অর্থ-বিত্ত আর সমর শক্তিতে বলিয়ান বড় প্রতিবেশী যখন পাশে আছে তখন বিশ্বের আর কেউ কিছু করতে পারবে না। তারা একথাও জানে যে, চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্য বড় বেশি ঘনিষ্ঠ। ফলে সেই রাশিয়াও বিরুদ্ধে যাবে না। অস্ত্র ব্যবসা তারও প্রয়োজন। মিয়ানমারের সেনারা আরো নিশ্চিত হয়েছে যে, স্বার্থের প্রয়োজনে ভারতও রয়েছে তাদের পাশে; ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বের করেও দেয়া হচ্ছে। মিয়ানমারের বাহিনী নিশ্চিত হয়েছে যে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে না বরং তারা মানবতার খাতিরে হলেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে। মিয়ানমারের জান্তারা আগেই নিশ্চিত হয়েছে, হত্যা-ধর্ষণ এবং নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা পালাতে বাধ্য হবে; রাখাইন জনশূণ্য করা যাবে। ফলে তারা নিশ্চিন্ত মনেই মিশন এগিয়ে নিচ্ছে; বাংলাদেশের সঙ্গে যে আলোচনা করেছে তা শুধুমাত্র আইওয়াশ! সময় ক্ষেপণের কৌশল! আপনারা নিশ্চিত থাকুন-মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের যে উচ্ছেদ অভিযান চলছে তার পেছনে যেমন আছে আর্থ-রাজনৈতিক প্রশ্ন তেমনি আছে ধর্মীয় প্রশ্ন। রোহিঙ্গারা মুসলমান না হলে আজ এই দুরাবস্থার মধ্যে পড়ত বলে ভাবার কোনো কারণ আছে? হিন্দু হলে ভারত এগিয়ে যেত, বৌদ্ধ হলে এগিয়ে আসত চীন; খোদ মিয়ানমারের সরকারও এই আচরণ করত না। খ্রিস্টান হলে এগিয়ে আসতো আমেরিকাসহ পুরো পাশ্চাত্য জগত। দুর্ভাগ্য- রোহিঙ্গারা মুসলমান। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় মুসলমানরা এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণ সহায়তা ছাড়া আর কিছু নিয়ে এগিয়ে আসতে পারছে না। জাতিসংঘের মতো‘হাতি’পোষা হচ্ছে বটে তবে মুসলমানদের কল্যাণে তা খুব কমই কাজে আসছে। এ অবস্থায় রোঙ্গিারা অসহায়ই থেকে যাবে। কিন্তু যে শিশুর সামনে মায়ের ইজ্জত হরণ করা হয়েছে, বাবাকে খুন করা হয়েছে কিংবা যে ভাইয়ের সামনে বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে অথবা যে সন্তানের সামনে মা-বাবাকে হত্যা করা হয়েছে সেই শিশু, সেই সন্তান একদিন জেগে উঠবেই। বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে- অসহায় রোহিঙ্গারা আজ হোক, কাল হোক স্বাধীনতার জন্য লড়বে। অধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার সংগ্রামে নেমে পড়বে তারা। স্বাধীনতার সে সংগ্রামে সর্বপ্রথমে তাদের কপালে জুটবে উগ্রবাদের তকমা! তবু তারা এগিয়ে যাবে- স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে। হয়ত একদিন আরাকান স্বাধীন হবে!
লেখক: রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিক।