যশোরকে বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার দাবি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:
বৃহত্তর যশোরকে বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার দাবি জানিয়ে শনিবার (২৮ অক্টোবর ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বৃহত্তর যশোর উন্নয়ন ও বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বিশিষ্ট সমাজসেবক শৈলেন্দ্রনাথ সাহা মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে বলা হয়, বাংলার প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী জেলা বৃহত্তর যশোরের মানুষ বহুকাল আগে থেকেই দেশ ও জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছে। উন্নয়নের দিক দিয়ে এই অঞ্চল নানাভাবে বঞ্চিত ও অবহেলিত। যশোরের বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার প্রতি বছর ৫ হাজার কোটি টাকার অধিক রাজস্ব পায়। বৃহত্তর যশোরের কৃষি খাত থেকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপদিত হয় প্রতি বছর। বৃহত্তর যশোর থেকে অর্জিত এই অর্থ দিয়ে স্থানীয় উন্নয়ন হয় কম। সরকারের মন্ত্রী পরিষদে বা নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এ অঞ্চলের মানুষ অবহেলার শিকার হয়ে আসছে। তাই বাধ্য হয়েই গঠন করা হয়েছে ‘বৃহত্তর যশোর উন্নয়ন ও বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদ’। সংগঠনের পক্ষ থেকে যশোরকে পৃথক বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার পাশাপাশি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও যশোরে আন্তঃজেলা রেল যোগাযোগ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, যশোর বিমানবন্দর আন্তজার্তিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ, অর্থনৈতিক জোন, বেনাপোল বন্দর আধুনিকায়ন, গ্যাস সরবরাহ, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, মহিলা ক্যাডেট কলেজ ও পর্যটন কর্পোরেশনের মাধ্যমে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের দাবি জানানো হয় সরকারের কাছে। প্রধানমন্ত্রী খুব শিগগিরি শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্র্ক উদ্বোধন করতে যশোরে যাবেন। বৃহত্তর যশোরবাসী আশা করে তাঁদের প্রাণের এই দাবিগুলো সেখানেই ঘোষণা দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, যশোর শুধু বাংলার সবচেয়ে পুরাতন জেলাই নয়, ভারতবর্ষের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন জেলা। যশোর শুধু একটি জেলা নয়, যশোর একটি ইতিহাস, স্বাধীন বাংলার উৎপত্তিস্থল, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুঁতিকাগার। তাঁরা বলেন, আজকের বিভাগ খুলনা এক সময়ে যশোরের একটি মহকুমা ছিলো যা যশোর জেলা হবার ৬১ বছর পর ১৮৪২ সালে মহকুমা এবং ১০০ বছর পর ১৮৮২ সালে জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই জেলাটি ভারত বিভাগের পর থেকে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার। সবচেয়ে হতাশার, যশোর থেকে পিছিয়ে থাকা অনেক জেলা আজ বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা পেয়েছে, অথচ যশোর যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যেসব যুক্তিতে অন্যান্য জেলাকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা হিসেবে বিভাগ করা হচ্ছে সেসব যুক্তি ও যোগ্যতার সকল কিছুই বিদ্যমান বৃহত্তর যশোরে। যশোর বিভাগের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা এ অঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের দাবি। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী যশোর ঈদগাঁহ ময়দানে এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘যশোর একটি পুরানো শহর। আমরা যদি আগামীবার ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে যশোরকে সিটি করর্পোরেশন করবো। সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছি।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সংবাদ সম্মেলন থেকে বৃহত্তর যশোরের চারটি জেলা যশোর মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলের পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং মেহেরপুরকে অন্তুর্ভুক্ত করে যশোরকে বিভাগ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানানো হয়।
মূল প্রবন্ধ পাঠ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানূজ্জামান বিপুল ও সহ-সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন সিদ্দিকী মিশু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোঃ নাসিরুল ইসলাম নাসির, আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক খান জাকির হোসেন দারা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান শাকিল, দপ্তর সম্পাদক জাকারিয়া অর্ণভ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, উজ্জ্বল হোসেন, সদস্য নূরুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, ডা. আবু সাঈদ, হাবিব ইবনে মোস্তফা, মনিরুজ্জামান, রাইহান উদ্দিন। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ভোরের ডাক পত্রিকার সম্পাদক কে.এম. বেলায়েত হোসেন, সাংবাদিক দারা মাহমুদ, নড়াইল জেলা সমিতির সহ-সভাপতি আরজ আলীসহ বৃহত্তর যশোরের শতাধিক ব্যক্তিবর্গ।