নির্বাচনে অযোগ্য করার নীলনকশা করছে ক্ষমতাসীনরা : খালেদা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী ও নেতারা হুমকি দিচ্ছে, আমাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেওয়া হবে। অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরাতে আমাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার নীলনকশা প্রণয়ন করছে ক্ষমতাসীনরা।’
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আদালতে তৃতীয় দিনের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে তিনি এসব কথা বলেন।
আদালতে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের অনেক সদস্য এবং শাসক দলের অনেক নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমাকে অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা এসব মামলার রায় কী হবে, তা আগাম জানেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে তাদের বক্তব্যে মামলায় আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। আমাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। সে বিষয়ে এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহলে তৎপরতায় বক্তব্য ও বিবৃতি থেকে এসব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন আরো বলেন, ‘আজ সেসব কারণে দেশবাসীর কাছে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে, আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর ন্যায়বিচার হবে না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘অথচ দেশে কত গুরুত্বপূর্ণ মামলা বছরের পর বছর ঝুলছে। শুধু আমার বিরুদ্ধে মামলাগুলো রকেটের গতিতে ছুটে চলছে। যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে— শিগগির শেষ কর, একটি রায় দাও। অনেক মন্ত্রীদের বলতে শুনেছি, আমাকে দণ্ড দিয়ে কাশিমপুর কারাগারে পাঠাবে।’
এর আগে দুপুরে সাড়ে ১১টার দিকে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ আদালতে পৌঁছান। আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর তাঁর আইনজীবীরা স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। পরে এই আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। শেষে বিচারক স্থায়ী জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে মামলার আগামী শুনানির দিন ৯ নভেম্বর পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন।
বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ দুটি মামলার নয়জনের পুনর্জেরা ও দুজনের জেরা-সংক্রান্ত এবং মামলাটি স্থগিত চেয়ে করা আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে আদালতকে অবহিত করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়। কিন্তু ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার সেই আবেদনও নামঞ্জুর করে দেন।
এরপর দুপুর ১টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। তিনি ১৫ মিনিটের মতো আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার পর মুলতবি প্রার্থনা করেন।
আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় বিএনপির চেয়ারপারসন আরো বলেন, ‘আত্মপ্রচারের জন্য আমি এই বক্তব্য দিচ্ছি না। বাড়তি কোনো সুবিধা ও মার্যাদা দাবি আদায়ের কোনো অভিপ্রায়ও অমার নেই। আমি শুধু বলতে চাই, একই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আরেকজন নেত্রী যে সুবিধা ভোগ করছেন, আমি কখনো আদালতের কাছে তেমন সুবিধা দাবি করিনি। দেশের সাধারণ সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে অধিকার পেলেই আমি খুশী।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ০২, ২০১৭)