দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ঢাকার বাড্ডায় বাবা-মেয়ে খুনের ঘটনায় ওই বাসায় সাবলেট থাকা দম্পতিকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে পরকীয়া প্রেম।

জোড়া খুনের এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়েছে; নিহত জামিল শেখের স্ত্রী আর্জিনা বেগম ও সাবলেট ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিককে আসামি করা হয়েছে সেখানে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবির বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আর্জিনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে শুক্রবার ভোরে খুলনার বটিয়াঘাটা থানা এলাকা থেকে শাহীন ও তার স্ত্রী মাসুমা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আর জামিলের ভাই শামীম শেখ বৃহস্পতিবার রাতে বাড্ডা থানায় গিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন বলে ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান।  

বাড্ডার ময়নারবাগ কবরস্থানের পাশে ‘পাঠানবাড়ি’ নামের একটি চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন গাড়ি চালক জামিল শেখ।

বৃহস্পতিবার ভোরে ওই বাসার একটি ঘর থেকে ৩৮ বছর বয়সী জামিল ও তার নয় বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত জাহানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের ধারণা, ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে জামিলকে হত্যা করা হয়। আর নুসরাতকে হত্যা করা হয় শ্বাসরোধ করে।

পুলিশ বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাসায় গিয়ে খাটের ওপর জামিল ও নুসরাতের লাশ পায়। জামিলের স্ত্রী আর্জিনা তখন তাদের পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে সিঁড়িতে বসে ছিলেন।

জামিলের পরিচিত গাড়ি চালক তুহিন হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাসায় গেলে আর্জিনা তাকে বলেছিলেন, রাতে ‘কয়েকজন এসে’ তার স্বামী আর মেয়েকে খুন করে গেছে। কিন্তু তাজা রক্ত দেখে তুহিনের মনে হয়েছিল, তা ‘বড় জোর ঘণ্টাখানেক আগের’।

লাশ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ আর্জিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু ওই বাসায় সাবলেট থাকা শাহীন ও মাসুমার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বৃহস্পতিবার সকাল থেকে।

পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুল কবির বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে আর্জিনা জানায়, আগে তারা যে বাসার দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকত, সেখানে তৃতীয় তলায় থাকত শাহীনরা। তখনই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। চার মাস আগে বাসা বদলের সময় আর্জিনাই কৌশল করে শাহীনদের সাবলেট নিয়ে আসে।”

পরকীয়া প্রেমের জের ধরেই বৃহস্পতিবার ভোর রাতে জামিলকে হত্যা করা হয় বলে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবিরের ভাষ্য।

তিনি বলেন, “শাহীনের সঙ্গে আর্জিনার প্রেমের বিষয়টি মাসুমা শুরুতে জানত না। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেও জড়িয়ে যায়।”

পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, আর্জিনার সঙ্গে শাহীনের প্রেমের বিষয়টি বাড়ির মালিক দুলাল পাঠানও তাদের বলেছেন।

জামিলের ভাইয়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, “দুই আসামি আর্জিনা বেগম ও শাহীন মল্লিক পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র ও শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে জামিল শেখকে হত্যা করে। আর নুসরাত জাহানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের আগে জামিল ও নুসরাতের লাশের সুরতহাল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, জামিলের কপালে একটি ও মাথায় পাঁচটি জখমের চিহ্ন ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে ওই জখম হয়েছে বলে তার মনে হয়েছে। লাশের পাশে একটি কাঠের টুকরো পাওয়া গেছে, সেটাও আঘাত করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/নভেম্বর ০৩, ২০১৭)