মালা আন্টি ও অন্যান্য কবিতা
মালা আন্টি
অ্যালবাম জুড়ে ছড়িয়ে আছে—কিছু সুখদ দৃশ্য
আমি নেড়েচেড়ে দেখি মাঝে মধ্যে—বিভূইয়ের রূপ
এক মালা আন্টির মুখ, কী উজ্জ্বল ছড়িয়ে আছে
ঘরের দেয়ালে দেয়ালে—বঙ্কিম ভ্রুর নিচে ঝুলন্ত
কী পেলব স্নেহ, কেমন চাহুনির ঢঙ...
আজ মালা আন্টির বেশ বয়স হয়েছে, তবু তার
ফটোগ্রাফে সেই মুক্ত জীবনের জৌলুস বিদ্যমান
কী আশ্চার্য, বাবার বোন সে, জানতাম না, কিন্তু
আজ বাবা নেই! নেবুলায় লুকিয়ে লুকিয়ে হয়তো
খুব আফসোস করছেন আমাদের নিয়ে; দেখো,
আজ নেই, এক পিতা নেই, এক বাবা নেই...!
তবু আমাদের মালা আন্টিরা থাকে কেউ কেউ...
রাষ্ট্র য্যানো (লজিক)
এক পরিধির উপর এতো পরিসীমা!
আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, না-দেখার
সুযোগে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে!
উত্তর মেরু থেকে দখিন মেরু—সর্বত্র
হাওয়ার মতো অবাধে ঘুরতে চাই
কিন্তু নাহার, দেখো, এইসব রাষ্ট্র য্যানো
এক একটি কাঠিম—প্যাঁচিয়ে আছে
এক একটি দীর্ঘ কানড়...এক একটি
দীর্ঘ পাথর...
পাঁচিলগুলো এভাবে ঘিরে আছে
যেন ভেতরের মানুষগুলো প্রত্যেকেই
এক একজন কয়েদি, এক একজন
খুনি, আততায়ী...এলিটদের দাস!
জানো, নাহার, পেঁপেবনের চেয়েও মধুর...
সে জগৎ পাঁচিলের ওপারে সেজে আছে
অথচ আমাদের পায়ের অধিকার নেই
উন্মুক্ত মাঠ নদী সবুজের ক্ষেত ধরে
এপার থেকে ওপার, ওপার থেকে
ওপারে যাওয়ার, নেই অধিকার!
য্যানো ধানের ব্লক (এন্টিলজিক)
এখানে ছড়িয়ে থাকা এইসব মানচিত্রের গ্লোব
যেন এক একটি ‘ধানের ব্লক’—অসংখ্য
আইলঘেরা ক্ষেতের সমন্বয়...
যদি তুলে দেই প্রতি ক্ষেতের আইল
একের সার, অষুধ, জল...ছড়িয়ে পড়বে
অন্যের ক্ষেতে...এভাবেই শুরু হতে পারে
আমাদের যৌথ সংসার
তবে এও তো জানো, ক্ষেতের সর্বত্র
সমতল নয়, কোথাও ঊঁচু, কোথাও নিচু...
যার ফলে ঘটে যাবে কোথাও মরু,
ডুবে যাবে ক্ষেতের কোথাও ফসল...
তবুও এখান থেকেই বেড়িয়ে আসতে পারে
সাম্যবাদের সমূহ রেণু, সমন্বয়সূত্র!
পুরুষস্নান
কাপড় নিংড়ানোর কৌশলে যদি ঝরে
যাপনের সব পাপ, জটাভুল...
অ-শ্রীময়... উবে যাবে একদিন, একদম
একদিন, তন্দ্রার গমনে...
পুরুষস্নান, গন্ধ মোচার ঢঙ,—নদীর
সান্নিধ্যোত্তর এক উদযাপন... প্রজলতানে
অবনত নারীঠাকুর—রিল্যাক্সময়...
কার্পেট
মিথুন পেরিয়ে কতদূর যাওয়া যায়?
সীমানার ওপারে যে জগৎ—এক
স্বাগতিকের আবাস—বড্ড ইশারাময়...
ভাবে, মহামানব—ঠিক যেন এক
কার্পেট—অন্যপদের ধুলোবালি,
সুখ দুখের আকর...সব বহন করে
সুখী করে আমাদের—এক রহিমময়...
অহম
সেও ভাবে, প্রেমায়ু—নিষ্প্রভ অবধি
ধাবমান এক ঘোড়া; শরীরের বহিপ্রভ
হারালেও অন্তসলিল প্রবাহমান...
এইসব অহম, হিংসাবাণ—এক দাহক—
রহম পুড়িয়ে বিভেদ উড়িয়ে মুক্তি চায়!
একদিন এই অবতল মানুষের এই—
মারণবাড় উগড়ে দিতে দৌড়াবে
বংশলতার পথে পথে অবিরাম—চূড়ান্ত
এক নিষ্প্রভ অবধি...
সংসার
কেউ তো একজন ভাবে, সংসার—মূলত
চুলের বিন্যাস, মনের বিন্যাস...যুগল তার
সম্পাদক—ক্ষেত্রপাল নয়—প্রভু, একদম‽
তিলে তিলে সাজিয়ে তোলে দৈনন্দিন
হিরণ-জুরির মালা—সুখের আকর ওঠে
এখানেই একদিন; কখনো কখনো হয়
কোনো কোনো সংসার বড্ড গজলময়...
দোলনা
চেয়ে দেখো, কেউ একজন ভাবে, নিরালায়...
আমাদের মায়েদের পেট, মানে জরায়ু—যেন এক
স্বর্গময় দোলনা, যেখান থেকেই শুরু আমাদের আয়ু!
এক কুটুম আসবে, অধীর অপেক্ষায় আছেন—মা
জমাট বাঁধে যা, তাই-ই ভেঙে আসে একদিন
খোলসহীন এক নির্যাস দোলনার রশি ছিড়ে
তারা আসে বাহকের মাংস চিড়ে রক্তপথে, স্বাগতম—
হিংসার রণধামে— মায়েরা বলে, পিতারা বলে...
ক্ষমাপ্রার্থী, হে কুটুম, ডেকে আনার জন্য
এমন রক্তবাণের তলে...