রোহিঙ্গা ইস্যু : সিপিএ সম্মেলনে রেজুলেশনের দাবি
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে রেজুলেশন আনার দাবি উঠেছে।
রবিবার (৫ নভেম্বর) সকালে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সে যোগ দেওয়া অতিথিদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। সিপিএ সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গা ইস্যু ছিল না। কিন্তু বিভিন্ন দেশের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সিপিএর সাধারণ অধিবেশনে রেজুলেশন নেওয়ার আহ্বান জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএর চেয়ারপারসন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, রেজুলেশন নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সবমিলে এখন বাংলাদেশ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে। কক্সবাজারের বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশের ওপর আর্থসামাজিক, পরিবেশগত ও জনসংখ্যার চাপ তৈরি হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ইতিহাস তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি অভিবাসী বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরির কাজ করছে। তিনি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে জাতিসংঘে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পর মাল্টার স্পিকার অ্যাঞ্জেলো ফারুগিয়া তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সিপিএর সম্মেলনে রেজুলেশন নেওয়ার আহ্বান জানান।
একই প্রস্তাব জানিয়ে সাউথ ওয়েলসের আইনপ্রণেতা মোহাম্মদ আসগার বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কমনওয়েলথ কী ভাবছে, তা মিয়ানমারকে জানানো উচিত।
পাকিস্তানের আইনপ্রণেতা নাফিসা শাহ বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারকে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে এবং নাগরিকত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের এ অবস্থানের সঙ্গে আছে পাকিস্তান। এ বিষয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে প্রস্তাবও পাস হয়েছে।
কানাডার একজন আইনপ্রণেতা বলেন, কানাডা ইতিমধ্যে ২৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে, কীভাবে আরও সহায়তা করতে পারে এবং পরবর্তী সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ কী—তা তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান।
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৬ নভেম্বর জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে যে প্রস্তাব উঠবে, তাতে ভোট দেওয়া হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে খুব জোরদার সমর্থন প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তারা হাজার হাজার বছর ধরে সেখানে বাস করছে। মিয়ানমার অন্য দেশে তাদের পাঠাতে পারে না, এ বিষয়টি সবার বলা উচিত।
কানাডার আরেকজন আইনপ্রণেতা রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে অন্যদের পক্ষে সহায়তা করা আরও সহজ হবে।
যুক্তরাজ্যের একজন আইনপ্রণেতা সিপিএর সম্মেলনে রেজুলেশন নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, এটি করা না হলে তা সহ্য করার মতো হবে না। তিনি বলেন, তাঁরা সম্মেলন শেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা দেখতে যাবেন। দেশে ফিরে তাঁরা তাদের সরকারকে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেওয়ার কথা বলবেন।
অস্ট্রেলিয়ার একজন আইনপ্রণেতা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীনের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। চীনও রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণসহায়তা পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, এই সমস্যা মিয়ানমার তৈরি করেছে। তাদেরই সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সংকট সমাধানে আলোচনা চলছে। অগ্রগতি দৃশ্যমান হতে হয়তো আরও সময় লাগবে।
এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া ও ক্যামেরুনের আইনপ্রণেতা বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন ও পাশে থাকার আশ্বাস দেন। ক্যামেরুনের একজন আইনপ্রণেতা বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো উদ্যোগে তাদের সহায়তা থাকবে।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/নভেম্বর ০৫, ২০১৭)