যাবজ্জীবন : বিভ্রান্তি কাটাতে রিভিউ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে আমৃত্যু কারাবাস জানিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছিল, তা ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’দাবি করে রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। আবেদনটি করেছে আসামিপক্ষ।
এ তথ্য জানিয়ে সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলছেন, ‘ওই রায়ের কারণে আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক বিবেচনায় ওই রায় দেওয়া হয়নি। বিভ্রান্তি দূর করার জন্য পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক হত্যা মামলার চূড়ান্ত বিচারে দেওয়া ওই রায় আপিল বিভাগেরই আগের আরেক রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
১৬ বছর আগে সাভারের ব্যবসায়ী জামান হত্যা মামলায় দুই আসামির আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেয়। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয় ২৪ এপ্রিল।
রায়ে বলা হয়, দণ্ডবিধির ৫৩ ধারা ও ৪৫ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে আমৃত্যু কারাবাস। এর ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সবাইকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা দিয়েই সোমবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তিনি জানান, প্রচলিত ফৌজদারি আইন ও কারাবিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর সাজা। এরপর আসামি রেয়াত পেলে ওই সাজার সময় আরও কমে যাবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫(ক) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ থেকে বিচারিক সময়ের হাজতবাসের সময়ও বাদ যাবে।
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ২০১৩ সালে এক রায়ে বলেছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ হল সাড়ে ২২ বছর কারাদণ্ড।
আপিল বিভাগের ওই রায় ও আইন বলবৎ থাকা অবস্থায় বিচারপতি সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের অপর রায় আসে; সেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ‘আমৃত্যু কারাদণ্ড’ বলা হয়।
এ বিষয়ে খন্দকার মাহবুব বলেছেন, ‘আপিল বিভাগের আগের রায় বাতিল না করেই এ রায় দেওয়া হয়েছে। ফলে রায়ের ব্যাখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (ক) ধারার কার্যকারিতা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির ক্ষেত্রে স্থগিত করা সমীচীন হয়নি। এটা দূর হওয়া প্রয়োজন। এ কারণে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়েছে।’
জামান হত্যা মামলায় আপিলের রায়ে বলা হয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা মওকুফ (রেয়াদ) পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি অন্য কোনো সুবিধা (রেয়াত) পাওয়ার দাবি করতে পারে না।
ব্রিটিশ আমলে করা আইন ও কারাবিধির বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানা অসঙ্গতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে বিচারপতি এস কে সিনহা আদালতের বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তির কথা বলে আসছিলেন।
গত বছরের ২৬ জুন গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলতে আপনারা মনে করেন ৩০ বছর। ধরে নেয়, সব জায়গায়। প্রকৃত পক্ষে এটার অপব্যাখ্যা হচ্ছে। যাবজ্জীবন অর্থ হল একেবারে যাবজ্জীবন, রেস্ট অফ দ্য লাইফ।’
এরপর আদালতে দেওয়া রায়েও একই মত প্রকাশ করেন তিনি।
ওই রায় প্রকাশের পরদিন তার ব্যাখ্যায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন,আপিলে যাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে, শুধু তাদের ক্ষেত্রেই আমৃত্যু কারাগারে কাটাতে হবে।
আর বিভিন্ন মামলায় যাদের যাবজ্জীবন সাজা হবে, তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারে থাকতে হবে না। দণ্ডবিধি অনুযায়ী ৩০ বছর জেল খেটেই বের হবেন তারা।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/নভেম্বর ০৬, ২০১৭)