গাজীপুর প্রতিনিধি : পুরান ঢাকায় ২০১২ সালে দরজি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার তিন আসামি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন।

তারা হলেন- বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার চেংগুটিয়া গ্রামের আতিকুর রহমানের ছেলে এ এইচ এম কিবরিয়া (৩১), মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার রাজৈইর গ্রামের আশেক উদ্দিনের ছেলে গোলাম মোস্তফা (২৬) ও নরসিংদীর মনোহরদী থানার চন্দনবাড়ি গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৪)।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় আদালত এ এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফাকে যাবজ্জীবন এবং সাইফুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে ওই তিন আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত তাদের তিনজনকে মামলা থেকে খালাস দেন। আদালতের আদেশ মঙ্গলবার কারাগারে পৌঁছালে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তারা কারাগার থেকে ছাড়া পান।

কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, ২০১২ সাল থেকে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার ওই তিন আসামি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের বন্দী ছিলেন। উচ্চ আদালতের আদেশ পেয়ে তাদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্মমভাবে পেটান ও কোপান। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তিনি শাঁখারীবাজারের রাস্তার মুখে পড়ে যান। রিকশাচালক রিপন তাঁকে রিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক বিশ্বজিৎকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সময় বিশ্বজিৎ লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারে নিজের দরজি দোকানে যাচ্ছিলেন।

এ হত্যাকাণ্ড তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। ২৬ মে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলার আসামিদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, রাশেদুজ্জামান, কাইয়ুম মিয়া, এস এম কিবরিয়া, এমদাদুল হক, সাইফুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা গ্রেফতার হন। বাকি ১৩ আসামি রাজন তালুকদার, ইউনুস আলী, আজিজুল হক, তারেক বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, মীর মো. নূরে আলম, আল আমিন শেখ, মনিরুল হক, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন পলাতক।

দেশব্যাপী আলোড়ন তোলা ওই হত্যা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন আদালত।

সাইফুল ইসলাম ও কাইয়ুম মিয়ার বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট তাদের খালাস দেন। অপর দুজন এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফাকেও বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টে তারা খালাস পান। মঙ্গলবার সাইফুল ইসলাম, এইচ এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা কারাগার থেকে ছাড়া পেলেন।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বিশ্বজিতের বাবাসহ ৩৩ জনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/নভেম্বর ০৭, ২০১৭)