তিমিরে তারানা থেকে
হাওয়া
বনের মৌমাছি সব একে একে উড়িয়ে এনেছে
হলুদ রঙের হাওয়া। হুমকি। ছড়ালো কি দিন আজ
ফুলে ফুলে, মৃদু পেট্রোলিয়াম সুবাসে?
কোথাও অরণ্য ছিল, আছে নাকি!
যদিবা অরণ্য থাকে, তার মধ্যে একটা কুটিরও থাকবার কথা,
কুটিরের পাশে চিরবিষণ্ন কামিনী গাছ।
সেই বলতে পারে, আমাদের ঈপ্সানত এই ভ্রুভঙ্গির কাছে
গোঁসাইবাড়ির মূল্য কত? ফলে জানতে ইচ্ছে হয়,
হাড়ের কীর্তন থেকে, আরক্তিম
প্রেমের বয়স থেকে
মে মাসের আয়ু আশলে কি বেশি?
প্রতিটি চিন্তাই ভুল। ভুল বলেই তো হাওয়া ফণা তোলে আর
সাপের খোলশ উড়ে যায়। অবিরাম দাও তুমি
স্নায়ুতে টঙ্কার।
কাঁপাও পাহাড়। মেঘ। ঐরাবত। অথচ জানো না
হিমাদ্রির নিচে আজ পরাগকেশর দোলে
বুকের ওপর, দোলে কার
ঘুুমের থাবায়?
দেহ
.
কেবল তোমার নামটিকে
আলতোভাবে ছুঁয়ে ধর্ম ও রাষ্ট্রের ভেদ আমি
কিছুটা বুঝেছি…
শুনেছি তৈমুর লঙ বহু গিরিপথ পাড়ি দিয়ে এসে
ছোট্ট এক সরোবরে থমকে দাঁড়িয়েছে
দেখতে স্নানদৃশ্য, ভীল রমণীর
মানুষেরা আর কত পড়বে গ্রন্থ, যদি নাই খুলবে
গ্রন্থি, হৃদয়ের
দেবলীনা, সেই কবে থেকে তুমি
ভাষাকে কেবলই টানছো বর্ণের ভিতর
আমি খুঁজছি আদিগন্ত পৃষ্ঠা মেলে
নৈশব্দের পরাগচুম্বন—
এইখানে, পাথরে ও তৃণে
নামকে ছাপিয়ে দেহ আজও
ফুটল না। ফুটবে না তবে
কোনো হরফেই?
আত্মা
.
কবরের ’পর দিয়ে হেঁটে হেঁটেকেউ যদি ফের চলে আসে
ভোরবেলা নগ্নপায়, সেই ভয় চুপিচুপি জ্বলে রত্নদীপে
আমার সমস্ত রাত্রি।
রাত্রি কি নিঃসঙ্গ এক বাদুড়ের নাম,
হৃদয়, মৃতের মুশায়েরা?
পাতালে সুড়ঙ্গ আছে, চাতালে ময়ূরশয্যা।
সুড়ঙ্গের এই শেষ মাথায় এসেই জানলাম,
অসমাপ্ত পৃথিবীর পথ।
বুঝেছি, নিষ্কৃতি নয়,
ছাতিম গাছের নিচে বসে, তুমি হে মৌনী, সেদিন
নিষ্ক্রান্তিই চেয়েছিল তবে!
কার থেকে? প্রেম আর প্রত্যাশার ফাঁকগুলো আজ
দাও যদি ভরিয়ে, গলিয়ে দেহমোম
আমি তবে সে তাড়নাপুষ্প হয়ে ফুটি।
গোলাপ ও কৌতুক
.
শুচিতা, তোমার কাছে এসে
অজস্র শুদ্ধীকরণে হারিয়েছি মন।
কফিনের ডালা খুলে যদি না তাকে চিনতে পারি
এই ভেবে ঘুরি শুধু মর্চুয়ারি।
দুরারোগ্য ব্যাধিহীন যারা ছেড়ে যায় পৃথিবীকে,
তারাও কি বলে যায়, অন্তর্ধানের পথ কতটা মসৃণ!
যেন অন্তরীণ হয়ে আছি দেয়ালের ভেতর। সুন্দরীর শয়নকক্ষে
ফটোফ্রেমের পেছনে যে টিকটিকি জাগে পাহারায়,
তারও মনশ্চক্ষুর আড়ালে।
যদি অট্টহাসিতে ভাঙে এই খেয়াল…
প্রুফরিডিংয়ের রুপালি অন্ধকারে ফেলে রাখি ‘হান্ড্রেড জোকস’।
জোনাকি তা পড়ে হ্যাজাক নিভিয়ে।
একটি ছিনে-জোঁকের অন্তর দিয়ে আমিও করেছি পাঠ
তোমার কৌতুকের শোণিতধারা।
দেখেছি গোপন গোলাপ পাপড়ি খুলে ফুঁশে ওঠে
অভিশাপের মতো।
তাই ভেঙে ফেলেছি মার্বেল। ছুড়ে দিয়েছি মুচড়ে-ওঠা
আর্শিমহলের দিকে।
আকাঙ্ক্ষা, তোমার কাছে এসে
টুকরো টুকরো দর্পণে হারিয়েছি মুখ।
সানাই
.
সমকামীদের বিয়েতে কি দেনমোহরের ব্যবস্থা থাকবে?
সুবহে সাদিকের সামান্য পর
এই প্রশ্ন আমাকে করেছিল পেয়ারা গাছের ডালে বসা
এক দোয়েল পাখি
পাখিটিকে খুবই চিন্তিত মনে হলো
মনে হলো সারারাত ঘুমায় নি সে
অথচ আমি তাকে কিছু ভাবনা ধার দিতে চেয়েছিলাম
এই যেমন আমাদের ভারতীয়তা, এই যেমন প্রমিত ভাষা
ইসলামি জঙ্গিবাদ ও খ্রিস্টানি মিডিয়া-সন্ত্রাস
কিংবা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র
ভিশন টুয়েন্টি…
অথচ সেহেরির সময় থেকে
সে কেবলই পেয়ারার পাতা চিবুচ্ছে
আর অপেক্ষায় আছে
ভোর হলেই কখন ঢুকে পড়বে
পৃথিবী নামক বিবাহমণ্ডপে
আমিও তাই আজানের পর থেকে
ইউটিউবের মিউজিক টানেলে বসে একা
বাজিয়ে চলেছি
বিসমিল্লাহ খানের সানাই
[সোহেল হাসান গালিব : জন্ম - ১৫ নভেম্বর ১৯৭৮, টাঙ্গাইল। বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি ফজলুল হক কলেজ, বরিশাল। প্রকাশিত বই : কবিতা—চৌষট্টি ডানার উড্ডয়ন ● সমুত্থান, ২০০৭ দ্বৈপায়ন বেদনার থেকে ● শুদ্ধস্বর, ২০০৯ রক্তমেমোরেন্ডাম ● ভাষাচিত্র, ২০১১ অনঙ্গ রূপের দেশে ● আড়িয়াল, ২০১৪ সম্পাদিত গ্রন্থ—শূন্যের কবিতা (প্রথম দশকের নির্বাচিত কবিতা) ● বাঙলায়ন, ২০০৮ কহনকথা (সেলিম আল দীনের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার) ● শুদ্ধস্বর, ২০০৮। সম্পাদনা [সাহিত্যপত্রিকা] : ক্রান্তিক, বনপাংশুল। ]