রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ নজিরবিহীন সঙ্কটে : প্রধানমন্ত্রী
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে এবং তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘নজিরবিহীন সঙ্কটে’রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় এই সমস্যার সমাধান করা যাবে।
শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ সমস্যার সমাধানে সফল হব।”
জাতীয় সংসদে বুধবার (১৫ নভেম্বর) প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকেই আরো চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বয়ে চলছিল বাংলাদেশ। এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও বিভিন্ন সময় একই কথা বলেছেন। সবশেষ ঢাকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সেও প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান সদস্য দেশগুলোর প্রতি।
মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য মো.আব্দুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত জবাবে বলেছেন, ‘সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সামরিক অভিযান ও সহিংসতার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
দুই মাসের মধ্যে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে বলেছেন, ‘বর্তমানে দশ লাখের অধিক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে।’
মানবিক কারণে এই বিপুল জনগোষ্ঠিকে ‘দীর্ঘকাল’বাংলাদেশে রাখা সম্ভব নয় বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
মিয়ানমারকেই এ সঙ্কটের সমাধান করতে হবে বলে পুনরায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘লক্ষ লক্ষ অসহায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখোমুখি। মনে রাখা প্রয়োজন রোহিঙ্গা সমস্যার মূল উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সে দেশকে করতে হবে।’
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও কর্মতৎপরতায় মিয়ানমারের জাতিগত নিধন বন্ধের দাবিটি আজ সার্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে।’
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নে গত ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সাংসদ মো. আবদুল্লাহর আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের আবাসনের জন্য তিন হাজার ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার পরিবারের জন্য। চার হাজার ১৮২টি নলকূপ এবং ২১ হাজার ২২৪টি স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপন হয়েছে।
এছাড়া ৩৬টি মেডিকেল ক্যাম্প, ১২টি মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র এবং ৬০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আর ৩১ হাজার ৮৭৫ জন এতিম রোহিঙ্গা শিশু চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/নভেম্বর ১৫, ২০১৭)