দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা ও গাইবান্ধার প্রাক্তন সংসদ সদস্য আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয়জনের মামলার রায় পড়া শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (২১ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১১টার দিকে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে ১৬৬ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন।

রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেছেন বিচারপতি মো. আবু আহমেদ জমাদার। আদালতে উপস্থিত আছেন আসামি মো. আব্দুল লতিফ, বাকিরা সবাই পলাতক।

 

 

 

এর আগে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) একই বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রাখা হয়।

গত ১১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হওয়ায় মামলাটিতে পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।

আব্দুল আজিজ ছাড়া মামলায় অন্যান্য আসামি হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। মামলায় ছয় আসামিদের মধ্যে মো. আব্দুল লতিফ কারাগারে আছেন। বাকি পাঁচ আসামি পালাতক।

আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রসিকিউশনের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মাত্র একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে ঘোড়ামারা আজিজসহ সকল আসামিদের পলাতক দেখিয়েই আদালতে মামলার বিচারিক কাজ শুরু হয়।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোটের অধীনে জামায়াত থেকে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ :
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ৯ অক্টোবর সকালে আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনাবাহিনীর ২৫-৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাঁড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে একজনকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটকদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করেন।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠেরহাট ব্রিজে পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরে স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিন দিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকেলে তাকে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ মাটির নিচে চাপা দেয়।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নের নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবৈধভাবে আটক করে। তাদের তিন দিন নির্যাতন করার পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং তাদের মরদেহ মাটিচাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মরণে একটি বধ্যভূমি নির্মিত হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ২২, ২০১৭)