কর্মবিরতিতে সরকারি কলেজের শিক্ষকরা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জাতীয়করণ করা বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা না দেওয়ার দাবিতে পূর্ব ঘোষণানুযায়ী কর্মবিরতি শুরু করছেন সরকারি কলেজের বিসিএস শিক্ষকেরা।
রবিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে ‘নো বিসিএস, নো ক্যাডার’ দাবিতে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি শেষ হবে কাল সোমবার।
এদিকে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে রবিবার ও কালকের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি সরকারিকরণ করা উপজেলা পর্যায়ের ২৮৫টি কলেজের শিক্ষকেরা যাতে ক্যাডার মর্যাদা না পান সেই দাবিতে রোববার তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। আগামীকাল সোমবারও কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।
আন্দোলনরত এসব শিক্ষকের দাবি, ‘নো বিসিএস নো ক্যাডার’। সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না করে নতুন জাতীয়করণ করা শিক্ষকদের জন্য নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি ও চাকরির অন্যান্য শর্তসহ দ্রুত স্বতন্ত্র বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। কোনোভাবেই তারা যেন বর্তমান ও ভবিষ্যতে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতি, পদায়নসহ কোনো সুযোগ-সুবিধার অন্তর্ভুক্ত না হতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যতীত কাউকে শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করা যাবে না।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আজ ও আগামীকালের সব পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান, পার্ট-৩) বিশেষ ও স্নাতক কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সোমবার স্নাতক পরীক্ষা রয়েছে। একই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত সাতটি কলেজেও আজ ও আগামীকালের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাননি এই রকম শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা দেওয়া হলে, তা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ২৪ নভেম্বর এই কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। নিয়োগ বিধিমালা না করে নতুন করে কলেজ জাতীয়করণ করা হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে যাবারও হুমকি দিয়েছেন তারা।
এ ছাড়া অবিলম্বে তাদের দাবি মানা না হলে আগামী ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারি একইভাবে কর্মবিরতি পালন করবেন ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকেরা। ওই সময়ও পরীক্ষা স্থগিত করা হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কলেজে শিক্ষা ব্যবস্থা বড় ধরনের অস্থিরতা ও সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই বলছেন, হঠাৎ করে এভাবে আন্দোলন ও পরীক্ষা স্থগিতের ঘটনায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে কয়েক লাখ পরীক্ষার্থীকে। এ ছাড়া এ সময় অন্যান্য শ্রেণির ক্লাসও বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হবে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আইকে সেলিমুল্লাহ খন্দকার বলেন, জাতীয়করণ করা কলেজ শিক্ষকদের কাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ হাজার শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের ক্ষতি করে কিছুতেই তাদের ক্যাডারভুক্ত করার সিদ্ধান্ত মেনে নেব না। সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে।
তিনি আরো বলেন, জাতীয়করণের ঘোষণা করার সময়েই প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, শিক্ষকেরা বদলি হতে পারবেন না। কারণ বদলি না হতে পারা হচ্ছে নন-ক্যাডার কর্মকর্তার বৈশিষ্ট্য। ক্যাডার কর্মকর্তারা বদলি হতে পারেন। তবু বিষয়টিকে জটিল করে তুলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের ২৮৫টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরনের ঘোষণা দিয়েছেন। অধিকাংশের ‘ডিড অফ গিফট’ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি কলেজ রয়েছে ৩৩৫টি। এর মধ্যে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষা ক্যাডার সদস্য আছেন প্রায় ১৫ হাজার। ২৮৫টি কলেজের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক আত্তীকৃত হওয়ার কথা রয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/নভেম্বর ২৬, ২০১৭)