চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে বিজয় মেলা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মেলা মাঠ সংলগ্ন রাস্তার পাশে নির্ধারিত পরিমাণে খালি জায়গা না রেখে এবং মেলা মাঠের মাঝখানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রচুর দোকান নির্মাণ করায় শহরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

 

অভিযোগ উঠেছে, দোকান বাড়িয়ে বাড়তি অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়েছে। একজন ব্যক্তির অতি লোভের কারণে বিজয় মেলার ভাবমূর্তি ক্রমান্বয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠছে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও আয়োজকদের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।  

 

জনদাবি অবজ্ঞা করেই এবারো চাঁদপুর শহরের হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে  মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা করার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। মোট ২৪টি শর্ত সাপেক্ষে আগামী ৮ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্য়ন্ত ২১ দিনব্যাপি মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদিও অনুমতি পাওয়ার বহু আগেই প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাঠ দখলে নিয়ে স্টল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিগত বছরের চেয়ে এবার মেলার সময়সীমা ১০ দিন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মহল ও জনসাধারণের দাবি ছিলো- হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বিজয় মেলা স্থানান্তর কিংবা এখানে হলে সময় কমিয়ে আনা। সেক্ষেত্রে ২১ দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠান মোটেও যৌক্তিক বলে মনে করেন না ভুক্তভোগী জনসাধারণ।

মেলার অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত পত্রের ২নং শর্ত অনুযায়ী দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের চলাচলের মূল রাস্তা হতে ১২ ফুট মাঠ ছেড়ে দিয়ে মেলার বেষ্টনী তৈরি করার নির্দেশনা থাকলেও দুই ফুট জায়গাও ছাড়া হয়নি। ১৩নং শর্ত অনুযায়ী মাঠের মাঝখানে দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখার প্রয়োজনে স্টল তৈরীর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হয়নি। ৫নং শর্ত অনুযায়ী মেলায় আগত পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। শর্ত ভঙ্গ করলে প্রশাসন যে কোন সময় মেলা বন্ধ করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হলেও এখনো আয়োজকদের টনক নড়েনি। এছাড়া আরো অনেক শর্ত ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শর্ত ভঙ্গ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন পাঠান বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা গতবছরের চেয়ে এবার স্টল সংখ্যা কমিয়েছি।’

চাঁদপুরের নবনিযুক্ত অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমি এখনো এডিএমর দায়িত্ব বুঝে নেইনি। বিজয় মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে অনুমতিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চাঁদপুর জেলা প্রশাসন যেই ২৪টি শর্তে বিজয় মেলার অনুমতি দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে :

১। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা অনুষ্ঠানে লক্ষ্যে মাঠ ব্যবহারের জন্য মাঠ কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। এবং অনুষ্ঠান স্থলের চতুর্দিকে অস্থায়ীভাবে টিনের বেড়া দিয়ে নিরাপত্তা বেস্টনী নির্মাণ করতে হবে।

২। মেলার দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকের চলাচলের মূল রাস্তা হতে ১২ ফুট মাঠ ছেড়ে দিয়ে মেলার বেষ্টনী তৈরি করতে হবে।

৩। মেলার গেইটে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ মেলা এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমান ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

৪। মেলার মূল প্রবেশ পথটি কমপক্ষে ৩০ ফুট হতে হবে। দর্শনার্থীদের প্রবেশ ও বাহিরের নিমিত্তে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে প্রবেশ ও বাহিরের পথ থাকতে হবে। প্রবেশপথে হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর মেশিনের সাহায্যে দেহ তল্লাশীর ব্যবস্থা করতে হবে।

৫। মেলায় আগত পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক পর্যপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৬। অনুষ্ঠান স্থল এলাকায় পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতিসহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট মোকাবেলার জন্য জেনারেটরর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৭। মেলায় আগত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে আয়োজক কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত সংখ্যা স্বেচ্ছাসেবক/ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করে মাঠ ও আশপাশ এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। উক্ত স্বেচ্ছাসেবক/ নিরাপত্তা কর্মীদের পরিচয়পত্র সরবরাহ করতে তাদের নামের তালিকা মেলা আরম্ভ হওয়ার আগে স্থানীয় থানায় জমা দিতে হবে।

৮। মেলা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে মেলা পরিচালনা কমিটির সকল সদস্যের নাম-ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারা থানায় জমা দিতে হবে।

৯। মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, যাত্রা, ভেরাইটি শো, অশ্লীল ও জনগণের বিরক্তিকর কোন কিছু প্রদর্শন করা যাবে না। তাছাড়া হাউজী, লাকী কূপন, কোন প্রকার র‌্যাফেল ড্র, ফটকাবাজি, ভ্রাম্যামাণ কোন পুতুল নাচ ও নাগরদোলা চালানো যাবে না।

১০। মেলার অবস্থানে ও অশপাশের কোথাও অসামাজিক /অপরাধমূলক কাজ যেমন, জুয়া, মদ, গাঁজা, অশ্লীল নাচ গানের আয়োজন করা যাবে না। মেলায় কোন প্রকার মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় ও সেবন করা যাবে না।

১১। বিজয় মেলার মঞ্চে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয় আলোচনা, দেশাত্ববোধক নাচ গান আবৃত্তি ইত্যাদি ব্যতীত অন্য কিছু চালানো যাবে না।

১২। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় স্থাপিত স্টলগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শন সমূূহের সমাহার থাকতে হবে।

১৩। মাঠের মাঝখানে দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখতে হবে। কোন স্টল ও নাগর দোলা থাকতে পারবে না।

১৪। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কোন ধরণের উসকানীমূলক বক্তব্য প্রদান করা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের অপপ্রচার করা যাবে না।

১৫। নামাজ ও আযানের সময় মাইক বাজানো বন্ধ রাখতে হবে। এবং শব্দ দুষণের মাধ্যমে জনসাধারণের বিরক্তি/অসুবিধা সৃষ্ট করা যাবে না। উচ্চস্বরে মাইক বাজানো যাবে না। মাইকের হর্ণ মেলার অভ্যন্তরে রাখতে হবে।

১৬। স্কুলের কোন কার্যক্রম থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে মেলার কার্যক্রম চালাতে হবে।

১৭। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কাজ করা হতে বিরত থাকতে হবে।

১৮। সরকারি বিধি-বিধান মেনে মেলার কার্যক্রম চালাতে হবে।

১৯। মেলার অভ্যন্তরে আয়োজক কর্তৃপক্ষের একটি অফিস রুম ও কন্ট্রোলরুম থাকতে হবে।

২০। মেলায় একটি পুলিশ ক্যাম্পের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

২১। প্রশাসন যে কোন সময় মেলা বন্ধ করতে পারবে।

২২। মেলায় প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।

২৩। প্রতিদিন ৩ থেকে ১০টার মধ্যে মেলার কার্যক্রম চলবে এবং নির্ধারিত তারিখ অর্থাৎ আগামি ২৮-১২-১৭ তারিখে মেলার কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

২৪। মেলায় আইন শৃংখলা জনিত পরিস্থিতি কিংবা শর্ত ভঙ্গের জন্য আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৭)