দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘দেশের এক সংকটজনক মুহূর্তে এবার সিপাহী-জনতার মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এসেছে। এই দিনটিতে ১৯৭৫ সালে সৈনিক ও জনতার মিলিত উত্থানে তাসের ঘরের মতো ধসে গিয়েছিল জাতিদ্রোহী ভয়ংকর চক্রান্ত। আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বিপ্লবে সেদিন যারা অংশ নিয়েছিলেন, আমি আজ তাদেরকে অভিবাদন জানাচ্ছি। সেদিনকার বিপ্লবে কেবল স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াই মুক্ত হননি। চক্রান্তের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশ। আজও বাংলাদেশ সংকট-কবলিত।’ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির সমাবেশে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া।


আন্দোলনের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘যদি তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয় তাহলে আমরা আন্দোলন করবো না। সমস্যা নিরসনে সরকার যদি কোনো এজেন্ডা নির্ধারণ ছাড়াও আলোচনায় বসতে চায়, আমরা তাতেও রাজি আছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র থাকবে, নাকি স্বৈরশাসন চলবে? সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে, নাকি একতরফা একদলীয় একটি সাজানো-পাতানো নির্বাচন হবে? দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, নাকি সংঘাত হানাহানি চলতে থাকবে? আমরা সংঘাত-হানাহানি চাই না। আমরা শান্তি চাই।’ সংলাপের বিষয় উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার নিরসন করতে। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের পক্ষে। কিন্তু বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে এই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সংকট সৃষ্টি করেছে। এই সংকটের সুরাহা ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা আসবে না। সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনও সম্ভব হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের দাবি মানছেন না।’
সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সর্বদলীয় সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল থেকে তার সরকারে কিছু মন্ত্রী নেওয়ার কথা বলেছেন। এ প্রস্তাব জনগণ গ্রহণ করেনি। আমি তাই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের একটা প্রস্তাব তুলে ধরি। আমি এ নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানাই। প্রস্তাবটি বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদেও তুলে ধরা হয়। কিন্তু সরকারি দল এ প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। এ নিয়ে আলোচনা করতেও তারা রাজি হয়নি।’


বেগম খালেদা জিয়া তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথপোকথনের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘এই রেকর্ডিংয়ের কথা আমাকে আগে জানানো হয়নি। এমনকি সেটি প্রচারের ব্যাপারে আমার কোনো সম্মতিও নেওয়া হয়নি। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও বেআইনি। সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে সরকারের যে কোনো সদিচ্ছা নেই, এর মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি যেন আমাকে অভিযুক্ত করার জন্যই ফোনটি করেছিলেন। তারপরও আমি আলোচনার দরজা বন্ধ করিনি। আশা করবো, সরকার সংলাপের পথে ফিরে আসবে।’


সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব সংগঠন চেষ্টা চালাচ্ছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, যে সকল রাজনৈতিক দল, সিভিল সমাজের সদস্য, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একটি সমঝোতার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন, আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’



খালেদা জিয়া বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত করে ফেলা হয়েছে। পিলখানা হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারীদের ব্যাপারে সমাজে এখনও নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে।’ সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে আমাদের অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি আমি আগেই পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছি। আওয়ামী লীগ এখন নানাভাবে তাদের নিরাপত্তা বিঘিœত করার অপচেষ্টা শুরু করেছে। আমি বিরোধী দলের প্রতিটি নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, সব ধর্মের মানুষের জীবন-সম্পদ-সম্মান ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা আপনারা নিশ্চিত করবেন। কোথাও কেউ কোনো উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করলে তা মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখবেন, শত্রুরা সক্রিয় রয়েছে। এখন আমাদের বিভেদ নয়, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবস আমাদেরকে সৈনিক-জনতার মিলিত উদ্যোগে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা রক্ষার যে শিক্ষা দিয়েছে আজ সেই চেতনা নিয়েই সামনে এগুতে হবে।



মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভা পরিচালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম।



(দিরিপোর্ট২৪/এমএইচ/বিকে/এইচএসএম/নভেম্বর ০৭, ২০১৩)