চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরের হাইমচরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার (১ এপ্রিল) চাঁদপুরে চরভাঙ্গা এলাকায় বাংলাদেশ স্কাউটসের ৬ষ্ঠ জাতীয় কমডেকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি হেলিকপ্টারে করে আসার সময় এখানকার জায়গাগুলো দেখেছি। হাইমচর অঞ্চলটি পছন্দ হয়েছে। এখানে আমরা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবো। এখানকার মানুষ কাজের সুযোগ পাবে, সঙ্গে একটি পর্যটন কেন্দ্র হবে, নৌ ভ্রমণের জন্য স্পট বানানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্কাউটস শতাব্দী ভবন নির্মাণ ও স্কাউটিং সম্প্রসারণের জন্য ১২২ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাবিং সম্প্রসারণের জন্য আরেকটি প্রকল্প অচিরই অনুমোদন দেওয়া হবে। জাতীয় স্কাউটস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর জন্য ৯৫ একর বনভূমি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। বিভিন্ন জেলায় ও অঞ্চলে স্কাউট ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে সুশিক্ষা পায়, তাদের মনমানসিকতা যেন ইতিবাচক হয়, তারা যেন সৃষ্টিশীল হয়, সেজন্য আমরা কাজ করছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে পরিবার থেকে সমাজের সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে দেখতে চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দু’টি করে কাব স্কাউট, রোভার স্কাউট চালু করতে সব রকমের সহায়তা দেবো। স্কাউটের উন্নয়নের জন্য প্রতিটি জেলায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। ’

তরুণদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে হবে দেশের জন্য, মানুষকে ভালোবাসতে হবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মানুষ এবং জীবজন্তু থেকে শুরু করে সকলকেই ভালোবাসতে হবে। দেশকে ভালোবেসে কাজ করতে হবে। কোনও মানুষ অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না, না খেয়ে থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, প্রতিটি মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে তোমরাই এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

এর আগে রবিবার সকাল ১১টার দিকে হেলিকপ্টারে করে সরাসরি চাঁদপুরের হাইমচরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পৌঁছে উপজেলার চরভাঙ্গা এলাকায় বাংলাদেশ স্কাউটসের ৬ষ্ঠ জাতীয় কমডেকার অনুষ্ঠান উদ্বোধন ও স্কাউটদের কুচকাওয়াচ পরিদর্শন করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গতকাল কমডেকার এলাকাটি ছিল একেবারে ধ্বংসস্তূপ। ঝড়ে সব তাবু এলোমেলো-লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। বিকালের মধ্যে তারা সব ঠিক করে ফেলেছেন। এই মনোবল ও শক্তি তারা পেয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছ থেকে। আপনি আসবেন এই উৎসাহেই তারা বিকালের মধ্যে সব কিছু ঠিক করে ফেলেছে।’

তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৬ লাখ স্কাউটস রয়েছে যা সংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীতে পঞ্চম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন, সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরাও ২০২১ সালের মধ্যে ২১ লাখ স্কাউটস তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। অনুষ্ঠানে স্কাউটসদের সেবা ও নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখসহ ডিজিটাল বাংলাদেশের আন্দোলনে ডিজিটাল ক্লাব তৈরি করে স্কাউটরা অবদান রাখছে বলেনও জানান তিনি। এছাড়াও গত ৯ বছর ধরে বাংলাদেশ স্কাউটসকে সহযোগিতা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্কাউটস প্রধান জাতীয় কমিশনারসহ স্কাউটসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, টেকসই সমাজ বিনির্মাণে স্কাউটিং- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চাঁদপুরে চলছে ষষ্ঠ জাতীয় কমডেকা সম্মেলন। ৩০ মার্চ শুরু হওয়া এ সম্মেলন চলবে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। চাঁদপুরের হাইমচরের চরভাঙ্গা এলাকায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রায় ৭ হাজার স্কাউট সদস্য অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারত, নেপাল ও আমেরিকা থেকে ২৫ জন বিদেশি রয়েছেন। দেশের সব জেলা থেকে ১৫শ’ মেয়ে, ৪ হাজার ৫০০ ছেলে, ৪৬০ জন কমর্কর্তা এবং ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক অংশ নিয়েছেন।