দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:
রোববার বিকেল থেকে আন্দোলন শুরু হলেও রাত একটার পর থেকে ঢাকা 
মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসতে থাকে একের পর এক 
শিক্ষার্থী। কারও পায়ে আঘাত, কারও মাথা ফেটে গেছে। কারও শরীরে ছররা 
গুলির আঘাত। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর মাথায় আঘাত করা হয়েছে। 
কারা তাঁদের মাথায় আঘাত করেছেন, তা বলতে পারছিলেন না তাঁরা। 



হাসপাতালে বেশ কয়েক জন নারী শিক্ষার্থীকেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া
হয়। রোববার রাত আড়াইটার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের মারধরে আহত
হয়ে হাসপাতালে আসতে থাকেন। তাঁরা বলেন, বহিরাগত কিছু ছাত্রলীগ
নেতা-কর্মীর হামলার শিকার হয়েছেন তাঁরা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে
গেলেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের নাম বলতে চাচ্ছিলেন না।

‘অজ্ঞাত’ বা ‘অজানা’ নাম দিয়ে তাঁদের জন্য টিকিট কাটে তাঁদের
বন্ধুরা। এমনকি কোটার পক্ষের আন্দোলনকারী নেতাদের কয়েক জন ঢাকা
মেডিকেলে কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে আহতদের তালিকা করার
সময় তাঁদের কাছেও নিজেদের নাম বলতে চাননি আহত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করেন, হাসপাতালে নাম লেখালে পরে পুলিশ তাঁদের
বিরুদ্ধে মামলা করবে।

একজন আহত শিক্ষার্থী তালিকার জন্য আসা আন্দোলনকারী নেতাকে বলেন,
‘যে সরকারি চাকরির জন্য আন্দোলনে নামলাম, এখন পুলিশের খাতায় নাম
উঠলে তো সেটি আর জুটবে না। প্লিজ আমার নাম লিখবেন না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ আর পর্যবেক্ষণ কক্ষটি
ভরে যায় আহত শিক্ষার্থীদের দিয়ে। গভীর রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত
হাসপাতালের বারান্দা, বাইরের প্রাঙ্গণ সব জায়গায় কেবল শিক্ষার্থীরাই জড়ো
হয়ে ছিলেন। তাঁদের কয়েকজন বলেন, এখন আন্দোলন থেমে গেলেও তাঁরা
ছাত্রলীগের ভয়ে হলে ফিরতে পারছেন না। হলে ফিরে কয়েক জন ছাত্রলীগের
মারধরের শিকার হয়ে আবার হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন। রাত তিনটার দিকে
একবার পুলিশের ধাওয়ায় হুড়মুড় করে ঢাকা মেডিকেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে
বাইরে থাকা লোকজন। হাসপাতালে এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোর
পৌনে ছয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে পুলিশের ১০টি গাড়ি আসে
আশপাশ থেকে সবাইকে সরিয়ে দেয়। এরপর ঢামেক হাসপাতালের ভেতরে
অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েক জনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। কার্জন হল
এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেওয়ায় সেখানে প্রচুর কাঁদানে গ্যাস
নিক্ষেপ করে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতাল এলাকায়। মেডিকেলের প্রাঙ্গণে লোকজনকে আগুন
জ্বালিয়ে গ্যাসের ঝাঁঝ নিবারণ করতে দেখা যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ আর
পর্যবেক্ষণ কক্ষে পা ফেলারও জায়গা নেই। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজালো গন্ধে
নাক চেপে ধরে আছেন অনেকেই। আতঙ্ক সবার চোখে মুখেই। সোমবার
ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অভিযান চালিয়ে কয়েক
জনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা
হয়েছে। তবে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার
গণমাধ্যমকে বলেন, তবে উপাচার্যের বাসায় হামলায় জড়িত হিসেবে যাঁদের
শনাক্ত করা হবে, তাঁদের ছাড়া বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হবে। সোমবার রাত
পর্যন্ত বিক্ষোভ, সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে তিনি জানান।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের গত দুদিনে ঢামেক
হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৮৬ জন। যার মধ্যে দুজনকে ভর্তি করা
হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো.
আলাউদ্দিন। দুদিনের আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১০
জন পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তা। তাঁদের বারডেম ও রাজারবাগ পুলিশ
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পিআইএম/১০ এপ্রিল,২০১৮