পানিতে ফুল ভাসিয়ে শুরু বৈসাবি উৎসব শুরু
রাঙামাটি প্রতিনিধি : চৈত্র সংক্রান্তিতে বর্ণিল আয়োজনে পাহাড়ে শুরু হয়েছে বর্ষবরণ ও বিদায়ের মহান উৎসব বৈসাবি।
বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) সকালে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসিয়ে চাকমা জনগোষ্ঠী উৎসবের প্রথম দিন ‘ফুলবিজু’ উদযাপন করেছে। আর ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী এদিন পানিতে ফুল ভাসিয়ে পালন করেছে ‘হারি বৈসুক’।
সকাল ৭টায় রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ী ঘাটে চাকমা জনগোষ্ঠীর ফুলবিজুতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্যাঞ্চল কমিটির সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা। এ আয়োজনে অংশ নেন চাকমা তরুণ-তরুণী ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
এরপর সকাল ৮টায় রাঙামাটি শহরের গর্জনতলি এলাকায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা অংশ নেন ‘হারি বৈসুক’-এ। তাঁরাও একইভাবে পানিতে ফুল ভাসিয়ে, ঐতিহ্যবাহী গড়াইয়া নৃত্য পরিবেশন, বয়স্কদের স্নান ও বস্ত্র দানের মাধ্যমে পালন করেন দিনটি।
শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) চাকমাদের মূল বিজু, ত্রিপুরাদের ‘বুইসুকমা’ পালিত হবে। ১৮ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠীর ‘সাংগ্রাই’ উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের বর্ষবরণ ও বিদায়ের মহান উৎসব বৈসাবি।
পাহাড়ের বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ত্রিপুরাদের সামাজিক উৎসব বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই, চাকমাদের বিজু ও তংচঙ্গ্যাদের বিষু উৎসবে পাহাড়ের মানুষ আনন্দে মেতেছে। বৈসাবিকে কেন্দ্র করে তিনদিন ধরে উৎসব করার কথা থাকলেও তা চলবে সপ্তাহব্যাপী। নদীতে ফুল ভাসানো, বয়স্কদের স্নান করানো এবং পানি খেলার পাশাপাশি পাহাড়ী সংস্কৃতি মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা, মধ্যে দিয়ে সপ্তাহ ধরে চলবে এ উৎসব।
পার্বত্য এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জাতি সমূহের ঐতিহ্য রক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশে এবং সকল ক্ষুদ্র জাতিকে এক কাতারে নিয়ে আসে এই বৈসাবি উৎসব।
১২ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিনকে বলা হয় ফুল বিজু। উৎসবের প্রথম দিনে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমারা বন থেকে ফুল আর নিমপাতা সংগ্রহ করে সেই ফুল দিয়ে ঘর সাজায় ও মা গঙ্গার উদ্দেশ্যে নদীতে ফুল ভাসায়।
১৩ এপ্রিল আর চৈত্র সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় মুল বিজু। এদিন ঘরে ঘরে রান্না হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার পাচন। তা দিয়ে দিন ভর চলে শুধু অতিথি আপ্যায়ন।
১৪ এপ্রিল ১লা বৈশাখ উৎসবের তৃতীয় দিন থেকে শুরু হয় মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি তথা পানি খেলা উৎসব। সপ্তাহ জুড়ে এই পানি খেলা উৎসবের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব। বৈসাবি উৎসব এর আনন্দ উচ্ছাস পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি আর সৌহাদ্য বাড়বে এমন প্রত্যাশা সকলের।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এপ্রিল ১২, ২০১৮)