বাঁশির রাগালাপে ছায়ানটের বর্ষবরণ শুরু
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাঁশিতে ভোরের রাগালাপ দিয়ে সূচনা হলো ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণের ৫১তম আয়োজন।
শনিবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ঠিক সোয়া ৬টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক রমনার বটমূলে আয়োজিত বর্ণাঢ্য এই আয়োজনের শুরু হয়। এবারের আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য- বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান।
অনুষ্ঠান শুরুর বেশ আগে থেকে এই বটমূলকে ঘিরে জড়ো হলো অগুনতি সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষ। সূর্য ফোটার আভা ধরে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা বুঝি শহরের প্রতিটি কোনা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল, ক্রমশ জড়ো হতে থাকলো রমনার বটমূলে; সুরে সুরে বঙ্গাব্দ- ১৪২৫ সালকে বরণ করে নিতে।
ছায়ানট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড়শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণে দুই ঘণ্টার এই আয়োজন সাজানো হয়েছে ১৬টি একক, ১২টি সম্মেলক গান আর ২টি আবৃত্তি দিয়ে। সকাল সোয়া ৮টার দিকে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটবে ছায়ানট-সভাপতি সন্জীদা খাতুনের শুভেচ্ছা কথন দিয়ে।
বরাবরের মতো এবারের আয়েজনটিও সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। পুরো অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা যাচ্ছে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও- http://bit.ly/chyntbd।
ছায়ানটের শিল্পী-কর্মীদের জন্য বটমূল সংলগ্ন সামান্য জায়গা ছাড়া প্রায় গোটা প্রাঙ্গনই উন্মুক্ত রয়েছে সবার জন্য। বটমূলের বর্ষবরণ আয়োজন সুষ্ঠু রাখতে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা।
ছায়ানট মনে করে বিশ্বমানব হবার আগে চাই শাশ্বত বাঙালি হবার প্রত্যয়। নতুন বাংলা বছরে তাই এবারের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শিকড়ের সন্ধান’।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানি আমলের বৈরী পরিবেশে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে ছায়ানটের যে যাত্রার সূচনা তা মূলত বাঙালির আপনসত্তাকে জাগিয়ে তুলবার, আপন সংস্কৃতিতে বাঁচবার অধিকার ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটাবার জন্য ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে শুরু হয় বাংলাবছরকে আবাহনের আয়োজন।
‘কায়মনে বাঙালি’ হবার প্রত্যয় নিয়ে সেই থেকে পাঁচ দশক ধরে বাংলা বছরের প্রথম লগ্ন পহেলা বৈশাখের প্রত্যূষে মানুষের ভালোবাসাধন্য এই সংগঠন আপন সংস্কৃতির অনুষ্ঠান করে আসছে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রমনার বটমূল, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলা নববর্ষ আজ বিশ্বময় বাঙালির সবচেয়ে বড় মিলনমেলা, একটি জাতীয় উৎসব। এই উৎসব আপামর বাঙালিকে প্রাণিত করে ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এপ্রিল ১৪, ২০১৮)