ঝুলে আছে রমনায় বোমা হামলার মামলা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ১৭ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্ত এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হলেও রমনা বোমা হামলা নিষ্পতি না হওয়ায় অন্য আসামিদের দণ্ড কার্যকর করা যাচ্ছে না।
আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এই মামলার আপিল ও ডেথরেফারেন্সের শুনানি শেষ পর্যায়ে উপনীত হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের বার বার সময়ক্ষেপণের কারণে ‘বিরক্ত’ হয়ে হাইকোর্টের উক্ত বেঞ্চ মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন।
তবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, আদালত পরিবর্তনের কারণে হাইকোর্টে মামলাটি থমকে আছে। আশা করছি, দ্রুত শুনানি শেষ হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবী সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের শুরুতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলাটির শুনানি শুরু হলেও পরে সেটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর পর থেকে দীর্ঘদিন মামলাটি পড়ে ছিল। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাটি বিচারপতি রুহুল কুদ্দস ও ভীষ্মদেব কুমার চক্রবর্তী বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে মামলাটি এই বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার রায় হয়েছে ওই হামলার প্রায় ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
একইবছর বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর ও আরিফ হাসান ওরফে সুমন হাইকোর্টে ফৌজদারি আপিল দায়ের করেন।
এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি আবদুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন জেল আপিল দায়ের করেন।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান নয়জন। তারা হলেন- আল-মামুন হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম, জান্নাতুল ফেরদৌস শিল্পী, আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ এমরান হোসেন, অসীম চন্দ্র সরকার, ইসমাইল হোসেন স্বপন ও আনসার আলী। একজনের পরিচয় জানা যায়নি।
এ ঘটনায় পুলিশ রমনা থানায় মামলা করে। ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর এ মামলায় মুফতি আবদুল হান্নান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর ঘটনার জট খোলে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলার তদন্তে গতি সঞ্চার হয়। ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে ওই ঘটনায় দুটি অভিযোগপত্র দেয়৷ এর একটি হত্যা ও অপরটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে।
এই ১৪ আসামির মধ্যে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন-মুফতি হান্নান, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা তাজউদ্দিন (প্রাক্তন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই) এবং হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর বদর। এদের মধ্যে প্রথম চারজন কারাগারে এবং শেষোক্ত চারজন পলাতক৷ অপর ছয় আসামিকেই হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
কারাগারে আটক এই ছয় আসামি হলেন- হাফেজ আবু তাহের, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুর রউফ ও শাহাদাত উল্লা ওরফে জুয়েল।
একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলাটি নিম্ন আদালতে এখনো বিচারাধীন আছে।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন বিট্রিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় রমনা হত্যা মামলার প্রধান আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এপ্রিল ১৪, ২০১৮)