সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে কি?
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সিরিয়ায় এবার যে হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা সেটি এক বছর আগের চেয়েও শক্তিশালী। সেবার যুক্তরাষ্ট্র একাই ছিল, এবার সাথে রয়েছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স।
আগের বার হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল একটি, আর এবার অন্তত তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু এতোসব সত্ত্বেও প্রশ্ন রয়ে গেছে সেই একই- আর তা হোলো, আমেরিকা কি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।
অন্তত যেটি তারা মুখে বলছে যে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার থেকে নিবৃত রাখা- সেটি কি আসলেই সম্ভব হবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে?
গত বছর এপ্রিল থেকে দুটি মৌলিক বিষয়ের পরিবর্তন হয়েছে- একটি হলো, আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আসাদের হয়তো পুরো সিরিয়ার ওপর সমান কর্তৃত্ব নেই, কিন্তু রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতার কারণে তার বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।
আর দ্বিতীয়টি হলো, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি- যেটিকে অনেকে স্নায়ুযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি বলছেন।
সিরিয়ায় এবারের হামলার তিনটি লক্ষ্যবস্তুকেই বেছে নেয়া হয়েছে রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য। এখন তাদের আশা, আসাদ তার আচরণে পরিবর্তন আনবেন।
কিন্তু সিরিয়া সংকটের আসলে কী হবে?
এই নিষ্ঠুর যুদ্ধের শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই সর্বশেষ হামলা কি সিরিয়ার অবস্থার পরিবর্তন আনবে- এটিই এখন বড় প্রশ্ন।
কিংবা এ সংকট শেষ হওয়ার কাছাকাছি কি যাওয়া সম্ভব হবে? দু:খজনক হলেও সত্যি যে, দুটি প্রশ্নের উত্তরই হবে- না।
অন্যদিকে, বার বার সতর্ক বার্তা ছিল রাশিয়ার তরফ থেকে, তা সত্ত্বেও হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা।
এখন কী করবে রাশিয়া?
সিরিয়া নিজেই আমেরিকার এই হামলা কতখানি গুরুত্ব দিবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে এবং এখানে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে কোন লড়াইয়েও তারা যাবে না।
রাশিয়ার তরফ থেকে প্রচারণা চলছে যে, রাসায়নিক হামলার কোন প্রমাণই নেই। আর পুরো বিষয়টিই সাজানো হয়েছে মস্কো ও আসাদকে বিপাকে ফেলতে।
আর মনে রাখতে হবে, এটা সেই রাশিয়া যার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা কূটনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে।
এটা সেই রাশিয়া যারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া দখল করেছে ইউক্রেনের একটি অংশকে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে বিশ্ব আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে- এটি বলছে জাতিসংঘও।
রাশিয়া হয়তো সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো বিশ্ব সুপার পাওয়ার না, কিন্তু রাশিয়ার স্বার্থে যা করা দরকার সেটি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভ্লাদিমির পুতিন, আর সেটা যেভাবেই হোক না কেন।
আর এসব কারণেই আমেরিকার লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
(বিবিসির প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সংবাদদাতা জোনাথন মার্কাসের বিশ্লেষণ- বিবিসি বাংলা অবলম্বনে)
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এপ্রিল ১৫, ২০১৮)