কে ছিলেন কার্ল মার্ক্স
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : উনিশ শতকের দার্শনিক কার্ল মার্ক্স বেঁচে থাকলে আজ তার ২০০তম জন্মদিন হত, আর এ বছরই কম্যুনিস্ট মেনিফেস্টোর বয়স হবে ১৭০ বছর।
সমাজ এবং পুঁজিবাদ সম্পর্কে নিজের বিখ্যাত তত্ত্বের জন্য মার্ক্সের খ্যাতি দুনিয়া জোড়া।
কিন্তু তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো কি সব সঠিক প্রমাণিত হয়েছে?
১. 'কাল্পনিক চাহিদা' তত্ত্ব
মার্ক্স বলেছিলেন পুঁজিবাদ এমন সব জিনিস তৈরি করবে, যা মানুষের দরকার নেই, কিন্তু তারপরেও সে বস্তুর চাহিদা তৈরি হবে। একেই তিনি 'কাল্পনিক চাহিদা' বলে নাম দিয়েছিলেন।
যদি ফ্যাশনের কথা ধরা যায়, চলতি হাওয়ার সাথে তাল মেলাতে আমরা এখনো গায়ে লাগে এমন কাপড়চোপড় তো প্রায়শই বাতিল করে দিচ্ছি।
অথবা স্মার্টফোন কোম্পানির বিরামহীন নতুন মডেল উদ্ভাবন এবং বাজারে ছাড়ার যে প্রতিযোগিতা তার সঙ্গেও একে কেউ মিলিয়ে দেখতে পারেন।
২. 'উত্থান এবং পতন' তত্ত্ব
পুঁজিবাদের উত্থান এবং পতনের স্বাভাবিক প্রকৃতি নিয়ে কার্ল মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বাণীকে ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তা ওই সূত্র মতই হয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, লাভের জন্য পুঁজিবাদের যে তীব্র ক্ষুধা, সেজন্য বিশ্বে মানুষের যা প্রয়োজন তার চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি হবে।
এবং শ্রমিকের মজুরি এতই কমবে যে তারা নিজেদের উৎপাদন করা পণ্য কিনতে পারবে না।
আর মানুষ পণ্য না কিনলে পুঁজিবাদীরা মুনাফা করবে কিভাবে? যেকারণে পুরো ব্যবস্থা ব্যর্থ ক্রমে হতে শুরু করবে।
৩. 'একাধিপত্য'
সাধারণ অর্থে পুঁজিবাদের বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার কথা। এটি হবার কথা পাড়ার মাংস ও মাছ বিক্রেতার মত ছোট ব্যবসা সমূহের মধ্যে।
কিন্তু মার্ক্স বলেছেন, কোম্পানিগুলো এত বড় হতে থাকবে যে তারা নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্রমে গ্রাস করে নেবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
মনে করে দেখুন তো, বড় সুপার মার্কেট চেইন রেখে কে কবে পাড়ার ছোট দোকানটিতে ঢুকেছেন?
৪. 'মধ্যবিত্তের সংকোচন'
কার্ল মার্ক্স বলেছেন, পুঁজিবাদের ধরণ অনুযায়ী মুনাফার জন্য বড় ব্যবসায়ীরা কর্মীদের বেতন ও সুবিধাদি কমিয়ে দেয়।
এতে মধ্যবিত্ত ক্রমে গরীব হতে থাকে। এর ফলে একটি বড় অংকের নগদ অর্থ অল্প কিছু মানুষের হাতে জমতে থাকে।
আজকের পৃথিবীতে৩৭০ কোটি মানুষের চেয়ে মাত্র ৪২ জন মানুষ বেশি ধনী।
চীন, ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৩৭০ কোটি।
৫. বিপ্লব?
কার্ল মার্ক্সের সবচেয়ে বড় তত্ত্ব ছিল পুঁজিবাদ নিজেই নিজেকে ধ্বংস করে ফেলবে।
তিনি বলছেন, যখন সবাই বুঝতে পারবে যে এই পদ্ধতিতে গলদ আছে, তখন তারা নিজেরাই বিপ্লব করবে।
কিন্তু সেটি এখনো বাস্তবে ঘটেনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কম্যুনিস্ট ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিপ্লবের নজির পৃথিবীতে আছে।
বিপ্লবীদের কেউ কেউ বলে থাকেন, সমাজের দুর্নীতির কারণে তারা সফল হতে পারছেন না।
আর অন্যরা বলে মার্ক্সের তত্ত্বই ভুল।
খবর- বিবিসির।
(দ্য রিপোর্ট/এনটি/মে ০৫, ২০১৮)