দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পুলিশি তাণ্ডব ও গণগ্রেপ্তারে ভীতিকর পরিবেশ দিনকে দিন আরো পরিব্যাপ্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদানসহ নানাভাবে হয়রানিও করছে পুলিশ।

শনিবার (৫ মে) বেলার সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।

বিএনপি নেতা বলেন, দুই সিটির বিভিন্ন থানা ও উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হানা দিয়ে ধরপাকড়ের তাণ্ডব চালাচ্ছে পুলিশ। গতকাল গাজীপুরে বিএনপি ও শরিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারসহ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে ব্যাপক হয়রানি করা হচ্ছে।

রিজভী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ টঙ্গী থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। এ ছাড়া টঙ্গীতে অঞ্চল ভিত্তিক একটি সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও গোপন বৈঠক করেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ২০ দলীয় জোট প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় জনতার ঢল দেখে আওয়ামী লীগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে হয়রানি শুরু করেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রশাসন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্বিচারে আক্রমণ করে বিরোধী নেতাকর্মীদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন ও খুলনায় পুলিশ কমিশনার এই দুই সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনে বড় বাধা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশে দুই সিটিতে পুলিশি তাণ্ডব চলছে। গণতন্ত্রকে নিরুদ্দেশ করার ফাইনাল কল দিতেই এই পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে ভোটারদের ওপর স্টিমরোলার চালানো হচ্ছে। নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে সরকারের প্রশ্রয়ে পুলিশ হয়ে উঠেছে স্বেচ্ছাচারী, অনিয়ন্ত্রিত ও বেপরোয়া।

বিএনপির এ নেতা বলেন, ভরাডুবির ভয়ে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। আওয়ামী শাসন কখনোই ভোটাধিকার, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর হয়নি। গণমাধ্যমে একতরফা ফলাফল ঘোষণা করাই প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে সাবেক এ ছাত্রনেতা বলেন, যেখানে দুই সিটির নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি ও ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইসি সেখানে তাদের দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে?

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বারবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও এখনো তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে কোনো কর্ণপাতই করছে না। উল্টো শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলীয় নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ইয়ার্কি-ঠাট্টা করছেন। এঁদের নিষ্ঠুর রসিকতায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতভম্ব।

রিজভী আরো বলেন, 'কারা আইনে একজন বন্দির সাথে প্রতিদিনই দেখা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন দূরের কথা, খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ১০ দিন পরপর দেখা করার আদেশ জারি হবে বলে শোনা যাচ্ছে। জুলুমশাহীর হিংস্র আচরণে বেগম জিয়াকে জর্জরিত করার জন্যই কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। দেশনেত্রীর সঙ্গে সরকারের এহেন আচরণে গোটা জাতি শুধু গভীরভাবে উদ্বিগ্নই নয়, মারাত্মকভাবে আতঙ্কিত।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন চৌধুরী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মামুন আহমেদ, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন এবং সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/মে ০৫, ২০১৮)