‘নিরাপত্তার কারণে খালেদাকে বাইরে রাখা যাবে না’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তার জন্য কারাগারের বাইরে কোনও হাসপাতালে রাখা যাবে না বলে শুনানিতে আপিল বিভাগকে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, ‘আমি আপিল বিভাগে (শুনানিতে) বলেছি, উনার (খালেদা জিয়ার) ইচ্ছামতো উনাকে একজন সেবিকা দেওয়া হয়েছে। যেটা জেল কোডে নেই। আর উনার ইচ্ছামতো ব্যক্তিগত চিকিৎসক উনাকে দেখেছেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আবার বাইরে এসে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। যেটা উদ্দেশ্যমূলক করেছেন। জামিন পাওয়ার জন্য এটা করেছেন। উনার যদি এমআরআই বা সিটি স্ক্যান দরকার হয়, উনি যেই হাসপাতাল পছন্দ করবেন, সেই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু উনাকে বাইরে (কারাগারের) কোনও হাসপাতালে রাখা যাবে না, উনার নিজের নিরাপত্তার জন্য।’
খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (৮ মে) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন একটি আপিল ফাইল করেছে। আর যেহেতু রাষ্ট্রকে পক্ষ করা হয়েছে, তাই রাষ্ট্রপক্ষে আমরা একটি আপিল ফাইল করেছিলাম। সেই আপিলের শুনানি মঙ্গলবার (৮ মে) শুরু হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে খুরশিদ আলম খান তার বক্তব্য রেখেছেন এবং আমি আমার বক্তব্য রেখেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্যে, নিম্ন আদালত যেভাবে এই মামলাটির (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) বিচার করেছেন, তা বলেছি। আমি বলেছি, এই ধরনের মামলায় এত স্বচ্ছভাবে কোনও আসামিকে সুযোগ প্রদান করে এই দেশে কেন, এই উপমহাদেশেও কোনও মামলা নিষ্পত্তি হতে দেখিনি। খালেদা জিয়ার মামলায় পাঁচজন সিনিয়র আইনজীবী তাদের বক্তব্য রেখেছেন। আর আদালত তাদের বক্তব্য অনুধাবন করেছেন। একজন আসামির পক্ষে সচরাচর একজন আইনজীবীই বক্তব্য রাখেন। এখানে পাঁচজন আইনজীবীকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’
মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘আমি একটি বিষয়ে আদালতের সামনে তুলে ধরেছি যে, উনি (খালেদা জিয়া) এ মামলাতে সময়ক্ষেপণ করেছেন। নিম্ন আদালতে নয় বছর লেগেছে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে। ২০-২২ বার হাইকোর্টের বিভিন্ন আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবং সেসব কারণে মামলা নিষ্পত্তিতে এতদিন সময় লেগেছে। সর্বশেষ তিনি নিজে বক্তব্য দেবেন বলে আদালতে প্রায় একবছর সময় নিয়েছেন। আমি বলেছি, এই মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার ব্যাপারে একরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। হাইকোর্ট ডিভিশন যে ডিসক্রিশন (আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা) দেখিয়েছেন, এটা সঠিক হয়নি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালতকে বলেছি, অলরেডি পেপারবুক তৈরি হয়ে গেছে। সোমবার আমাকে পেপারবুক সরবারহ করা হয়েছে অফিস থেকে।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হাইকোর্ট বিবেচনায় নিয়েছেন যে, উনি নিম্ন আদালতেও জামিনে ছিলেন। কাজেই এখনও জামিন পেতে পারেন। এ ব্যাপারে আমি আপিল বিভাগে বলেছি, তখন যে বিচার (বিচারিক আদালতে জামিন) হয়েছে, সেময় উনি দণ্ডিত ছিলেন না। এখন উনি দণ্ডিত ব্যক্তি। কাজেই বিচারাধীন মামলায় জামিন দেওয়া, আর দণ্ডিত ব্যক্তিকে জামিন দেওয়া একই মানদণ্ডে করা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার ব্যাপারে যে কথাটা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি দেখিয়েছি, উনাদের নিয়োজিত চিকিৎসকই উনাকে শুধুমাত্র একটি নাপা খেতে বলেছেন, ব্যথার ওষুধ। আর উনার যেসব শারীরিক সমস্যা আছে, এগুলো ৩০ বছর যাবত, ২০ বছর যাবত ও ১০ বছর যাবত। এটা নতুন কিছু না।’
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ আমি বলেছি, রাষ্ট্র একটি মেডিকেল বোর্ডও করেছেন। মেডিকেল বোর্ড সেরকম কোনও পরামর্শ দেয়নি যে, উনাকে বাইরের কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। এখন যেই অবস্থা দাঁড়িয়েছে, পেপারবুক রেডি হয়ে গেছে এ মামলার। যেকোনও দিন হাইকোর্টে এটার শুনানি শুরু হতে পারে। এ অবস্থাতে মামলার শুনানি পেন্ডিং রেখে উনি জামিন পেতে পারেন না। বরং উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ যেগুলো আছে, সেগুলো খণ্ডাতে পারেন।’
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মে ০৮, ২০১৮)