দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করুন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। তাহলেই দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইবে, মানুষ স্বস্তি ফিরে পাবে।’

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় ফখরুল এসব কথা বলেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা-নিঃশর্ত মুক্তি এবং ডা. শামীউল আলম সুহানের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রতিবাদ সভাটির আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণই হচ্ছে এই দেশের মালিক। সেই মালিকদের যে চাহিদা, আশা আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ করবার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এই দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আলোচনা করুন, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, তার সঙ্গে কথা বলুন এবং নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় গুন্ডাদের ঠেকানোর জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করুন, যাতে মানুষ নির্ভয়ে নিরাপদে ভোট দিতে যেতে পারে এবং সঠিক রায়টা পাওয়া যায়। এই ব্যবস্থাগুলো করুন। তাহলে অবশ্যই এই দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইবে, মানুষ স্বস্তি ফিরে পাবে।’

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওটা আগে ঘুরুক, পৃথিবী পরিক্রম করুক, তারপর দেখা যাবে। যাই হোক এটারও মালিকানা চলে গেছে জানেন তো। স্যাটেলাইটের মালিকানাও চলে গেছে দুজন লোকের হাতে এবং সেখান থেকে আপনাকেও কিনে নিতে হবে। চুক্তি হচ্ছে অনেক। এই চুক্তি করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? যে চুক্তিই করেন না কেন আপনি, সেই চুক্তি তো জনগণের চুক্তি নয়। আমি এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলব না। কারণ এ বিষয়টি ভালো করে দেখিনি। আগে দেখি চুক্তিগুলো কী হয়েছে?’

রোহিঙ্গার বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কিন্তু চুক্তি করেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরৎ পাঠানো গেছে? কেউ তার নিজ দেশে যেতে পারে নাই। যেটা সবচেয়ে আমার বেশি দরকার তিস্তা চুক্তি সেটিও হয় নাই।’

এ সময় বিএনপি নেতা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। গোটা দেশের মানুষকে এক করতে হবে। এক করে এই ভয়াবহ দানবকে সরাতে আমাদের কাজ করতে হবে। অবশ্যই অন্যন্য রাজনৈতিক দল, ধর্ম, বর্ণ সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এই দানবকে সরাতে হবে। মালয়েশিয়াতেও দেখা গেল এই ধরনের ঐক্য না হলে এটা খুব ডিফিকাল্ট। সেজন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়েই এদের পরাজিত করতে হবে।’

মালয়েশিয়ার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘মালয়েশিয়ার কাছ থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার আছে। আনোয়ার ইব্রাহীম, মাহাথির মোহাম্মাদের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার ছিলেন। তিনিই তাঁর দল থেকে বের করে জেলে দেন বিভিন্ন রকম মিথ্যা অপবাদ, মামলা দিয়ে। সেই আনোয়ার ইব্রাহীমের পার্টি, আজকে সবচেয়ে বড় পার্টিতে পরিণত হয়েছে। মাহাথির মোহাম্মাদকে তারাই নিয়ে এসেছে, যে দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে, যখন দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বলেছে আপনিই এসে আমাদের নেতৃত্ব দিন। মাহাথির মেনে নিয়েছেন তাঁর শেষ বয়সে এসে। একমত হয়ে নির্বাচন করেছেন, সর্বোচ্চ ভোটে জয়লাভ করেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি নির্বাচিত হয়েই দুটি কথা বলেছেন, এক আমি প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না, দুই আমি আনোয়ার ইব্রাহীমকে অতি দ্রুত মুক্তি দিয়ে তাকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেব। বলেছেন, তাঁকে যে সাজা দিয়েছিলাম, আমি ভুল করেছি। ১১ বছর সাজা দিয়েছিলেন, এখনো জেলে আছেন। আজকে সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।’

বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর সঞ্চালনায় এবং বিএসএমএমইউর সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল কুদ্দুস, গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক আক্তার হোসেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মে ১২, ২০১৮)