নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজা কেন কম
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজার হার মাত্র ৩ শতাংশ বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব মামলায় কেন সাজার হার কম, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
শনিবার (১২ মে) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা: বিচারপ্রার্থীগণের প্রত্যাশা ও জেল আপিল মামলা পরিচালনায় আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজা কম হওয়ার কারণে হতাশ হলে হবে না। ওয়ার্কশপ করলে এর কারণ বের করা সম্ভব। এজন্য একটি কর্মশালা করাও প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘দরিদ্রবান্ধব ও জনকল্যাণকর বিচার ব্যবস্থার অন্যতম শক্তি লিগ্যাল এইড। আইনের দৃষ্টিতে সমতার আইনগত সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইনগত সহায়তা পাওয়া অস্বচ্ছল মানুষের অধিকার, যা রাষ্ট্রের এক অপরিহার্য দায়িত্ব।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা দিতে ২০০০ সালে প্রণীত আইনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এর ব্যাপ্তি তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছেছে। সময়ের প্রয়োজনে এ আইনটিও যুগোপযোগী করা হয়েছে। এর অধীনে নীতিমালা ও প্রোবিধানমালাও হালনাগাদ করা হয়েছে।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি জেনে খুশি হয়েছি, বিগত ৯ বছরে মোট ৩ লাখ ৫৯৮ জন ব্যক্তিকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে জেলা কমিটির মাধ্যমে ৮০ হাজার ৮৬৫টি দেওয়ানি, ফৌজদারি ও পারিবারিক মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। একই সময়ে সরকারি খরচে সুপ্রিম কোর্টে ১ হাজার ৮০৩টি জেল আপিল মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।’
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসকে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি করা হবে। মামলার শুনানিকালে বা বিচারের যেকোনও স্তরে অসহায় নিঃস্ব মানুষকে আইনজীবীবিহীন পেলে তাকে আইনি সহায়তায় লিগ্যাল এইড অফিসে প্রেরণের গুরুত্বারোপ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আগত জেলা জজদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জেলখানার অভ্যন্তরে থাকা কারাবন্দিদের খোঁজখবর নিন। তাদের সুযোগসুবিধা সম্পর্কে অবহিত হোন। অনিয়ম থাকলে কর্তৃপক্ষের নজরে আনুন। বিনাবিচারে আটক থাকলে তাদের আইনি সহায়তার উদ্যোগ নিন।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি কারাগারের সঙ্গে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনের জন্য গুরুত্বরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামির অর্থদণ্ড পরিশোধ সহজ করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে তা সঠিকভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে লিগ্যাল এইড অফিসাররা এবং জেল সুপাররা মনিটরিং করবেন। থানা থেকে আসামিকে কোর্টে হাজিরের সময় আসামিকে জিজ্ঞাসা করতে হবে আইনজীবী নিয়োগ করার সামর্থ আছে কিনা। আইনজীবী নিয়োগে অসমর্থ হলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনজীবী নিয়োগ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘জেল আপিল মামলা নিষ্পত্তির জন্য পৃথক একাধিক বেঞ্চ গঠন করা যায় কিনা, তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে। উচ্চ আদালতে সরকারি আইন সেবার মান উন্নয়নে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের আন্তরিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জেল আপিল মামলার আবেদনের সঙ্গে রায়ের কপি সংযুক্ত না করেই জেল কর্তৃপক্ষ অনেক সময় আবেদন কোর্টে পাঠিয়ে দেয়, যা অসম্পূর্ণ। ফলে ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করা যায় না। সংশ্লিষ্ট শাখায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকে।’
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘লিগ্যাল এইডের মামলায় শাস্তিপ্রাপ্ত আসামিকে বিনাখরচে রায়ের সার্টিফায়েড কপি দিতে হবে, আদালত থেকে কারাগারে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষকেও রায়ের কপি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে।’
নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় সাজার হার মাত্র ৩ শতাংশ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কেন সাজার হার কম তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ বিষয়ে একটি কর্মশালা করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ না পেলে বিচারক কীভাবে সাজা দেবেন? ধর্ষণ মামলায় সাজা বেশি। এ মামলা প্রমাণে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিকটিমের মেডিকেল এভিডেন্স পাওয়া অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে মেডিকেল এভিডেন্স বা মেডিকেল রিপোর্ট পেতে দেরি হলে মামলা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই ভিকটিমের দ্রুত মেডিকেল এভিডেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হতে হবে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী, উপ-কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহিন আনাম প্রমুখ।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/মে ১২, ২০১৮)