‘খালেদার মুক্তির পথে বাধা ৭ মামলা’
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপিল বিভাগ জামিন বহাল রাখলেও এখনই মুক্তি মিলছে না। তার মুক্তি পেতে আরো সাতটি মামলা বাঁধা হয়ে রয়েছে। এসব মামলায় জামিন পেলেই কারগার থেকে মুক্ত হবেন তিনি। তার আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমনটাই জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতির কক্ষের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আপিল বিভাগের রায়ের পর খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আর কোনও বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে-মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কিছুটা বাধা আছে। কারণ সরকার নানা কৌশলে চেষ্টা করবে, তার মুক্তি বিলম্বিত করতে। নিচের (বিচারিক) আদালতের কতগুলো মামলায় তাকে আসামি দেখানো হয়েছে। সে মামলাগুলোতে তার জন্য আমাদের জামিন নিতে হবে। সেই জামিন নিতে যতটুকু সময় লাগে, সেই সময়টুকু পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা খুব চেষ্টা করব খুব দ্রুত গতিতে...।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপিল বিভাগ যেহেতু তার (খালেদা জিয়ার) জামিন বহাল রেখে দিয়েছেন, এখন নিম্ন আদালতে জামিন পেতে আর খুব বেশি অসুবিধা হবে না। সুতরাং আমরা চেষ্টা করবো খুব শিগগির ওই মামলাগুলোতে উনার জামিন নিতে। কারণ, আমাদের তো একটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো সম্পন্ন করতে হবে। সুতরাং সেই জামিনগুলো পাওয়ার পরে খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং খুব শিগগির ফিরে আসবেন।’ এ ধরনের সাতটি মামলা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এর আগে বুধবার সকালে হাইকোর্টের জামিন স্থগিতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটির হাইকোর্টের আপিল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এই সময়ের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি সম্ভব কিনা জানতে চাইলে মওদুদ বলেন, ‘শুনানি শুরু হলে তখন বোঝা যাবে। শুনানির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তখন বোঝা যাবে, কতদিন লাগবে। এটা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না।’
এর আগে গত ৮ ও ৯ মে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রসঙ্গত,গত ১২ মার্চ দুদকের আবেদনের শুনানি নিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। পাশাপাশি এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
পরে ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। একইসঙ্গে এই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দেন আদালত। আর আপিল আবেদনের সারসংক্ষেপ পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে দুদককে নির্দেশ দেন। এছাড়া ৮ মে ওই আপিল আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে ওই দিন বিকালে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন সেখানেই আছেন। ওই রায়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে এ মামলার অপর আসামি তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা জরিমানাও করা হয়। (দ্য রিপোর্ট.টিআইএম/১৬ মে,২১০৮)